প্রতীকী ছবি।
বিপর্যয়ের আঘাত আছে, তার জন্য বিমাও আছে। কিন্তু জানেন ক’জন! সরকারি আমলারা বলছেন, ‘এই তো প্রচার চলছে, গাঁয়ের আনাচ কানাচে।’ কিন্তু আবাদি মানুষের কানে সে আওয়াজ ঢুকছে কই। প্রশ্নটা তাই থেকেই যাচ্ছে কৃষি-বিমার প্রচার আছে তো?
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে ক্ষতির ছায়া কখনও কখনও প্রলম্বিত। পরের চাষের কুল কিনারা না পেয়ে অনেকেই হাত পাতছেন মহাজনের কাছে। তার পর সময়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে নিঃস্ব হচ্ছেন। ‘বাংলা ফসল বিমা’ প্রকল্প সে জন্যই। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে— গত কয়েক বছরে বিমার প্রিমিয়াম টাকা পড়ে থাকছে কৃষি দফতরেই। আর সে সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকায় কৃষকেরা হাত পাতছেন গ্রামের মহাজনের কাছেই।
জুন মাস থেকে খরিফ মরসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলায় চাষের আগে, ফসল বিমার আবেদন করেছেন হাতে গোনা কয়েক জন। যার ফলে জেলায় ৬ লক্ষেরও বেশি কৃষক পরিবার থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৩২ হাজার কৃষক পাট চাষের বিমা করেছেন। আমন ধানের আবেদনের শেষ দিন ৩১ অগস্ট। এখনও পর্যন্ত আবেদন করেছেন মাত্র ১৫ হাজার।
মুর্শিদাবাদের কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপসকুমার কুণ্ডু বলছেন, ‘‘জেলাজুড়ে মাইকে প্রচার হচ্ছে। পঞ্চায়েত স্তরে ফসল বিমার জন্য শিবিরও করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের আগ্রহ কোথায়।?’
জেলার আনাচকানাচে খোঁজ নিয়ে অবশ্য জানা যাচ্ছে, কষকদের অধিকাংশের কাছেই কৃষি-শিবিরের খোঁজ নেই। বস্তুত, ফসল বিমা বিষয়টাই জানেন না তাঁরা। বেলডাঙার আবদুল হাসনাত কিংবা ডোমকলের হামিদুল শেখ স্পষ্টই কবুল করছেন, ‘‘এমন বিমা যে রয়েছে তা তো শুনিনি কখনও।’’ জেলা পরিষদের কৃষি ও সমবায় দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শাহনাজ বেগম বলছেন, ‘‘সচেতনতার অভাব সত্যিই রয়েছে আর এ ব্যাপারে কৃষি দফতরেরই দায়িত্ব আবাদি মানুষকে সচেতন করা।’’
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ৬ লক্ষ কৃষক পরিবার রয়েছে। ২০১৭ সালে খরিফ মরসুমে জেলার মাত্র ১২.৫ শতাংশ কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় এসেছিলেন। গত বছর তা বেড়ে হয়েছিল প্রায় ৩২.৩৩ শতাংশ।
জুনের শুরু থেকে ফসল বিমা আবেদন সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। পাটের বিমার সময়সীমা ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। মাত্র ৩২ হাজার কৃষক পাটের বিমা করেছেন। ৩১ অগস্ট পর্যন্ত আমনের বিমার সময় সীমা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৫ হাজার আমন চাষি বিমার আবেদন করেছেন। জেলা পরিষদের এক কর্তা বলছেন, ‘‘অস্বীকার করে লাভ নেই, কৃষি দফতরের প্রচারে যখেষ্ট খামতি রয়েছে। ফসল বিমা সম্পর্কে জানেনই না কৃষকেরা।’’