শিলা বৃষ্টির ফলে পাট চাষে ক্ষতি। — ফাইল চিত্র।
কথায় আছে আশায় বাঁচে চাষা। তাই তো গত বছর পাটের দাম কম থাকলেও মুর্শিদাবাদের চাষিরা হয়তো দাম বাড়বে এই আশায় উৎসাহ নিয়ে এবছর পাট চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর শিলাবৃষ্টির কারণে জেলাজুড়ে পাট চাষের ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে এবারে পাট গাছে ফুল ধরেছে। যার জেরে চিন্তায় পড়েছেন পাট চাষিরা। পাটের দাম ভাল না পেলে তার প্রভাব জেলার অর্থনীতির উপরেও পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপনকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল হল পাট। তার দামের সঙ্গে এই জেলার অর্থনীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়। গত বছর পাটের উৎপাদন মার খাওয়ার পাশাপাশি দামও কম ছিল। যার প্রভাব বাজারে পড়েছিল। এবছরও পাট চাষের অবস্থা খারাপ বলে খবর পেয়েছি।’’
চাষিরা জানাচ্ছেন, পাটগাছে ফুল হয়ে গেলে সেই পাটে তন্তু ভাল হয় না। ফলে পাট চাষ ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে পাটের বীজ বপন করা হলে অনেক সময় ফুল চলে আসে। সেই সঙ্গে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাতেও ফুল ধরে। এ বারে কখনও কাঠফাটা রোদ, কখনও বা দুদিন বৃষ্টির পরে ফের কাঠফাটা রোদ। আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারণে পাটের বৃদ্ধি কমে গিয়েছে। ফলে গাছে ফুল দেখা দিচ্ছে, পাট গাছে শাখাপ্রশাখা দেখা দিচ্ছে।
তবে জেলা কৃষি দফতরের কর্তারা এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, পাট আলোক-সংবেদনশীল। দুই শতাংশ ইউরিয়া স্প্রে করলে কিছু কাজ হবে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কৃষি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শাহনাজ বেগম বলেন, ‘‘শিলাবৃষ্টিতে পাট চাষের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনই পাট গাছে ফুল আসার খবর আমরা পেয়েছি। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।’’
জেলার পাট চাষিরা জানান, ২০২১ সালে পাটের উৎপাদন যেমন ভাল হয়েছিল, তেমনই সে বার দামও ভাল পেয়েছিলেন চাষিরা। যার জেরে গত বছর মুর্শিদাবাদের চাষিরা বেশি জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। কিন্তু গত বছর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে পাটের উৎপাদন যেমন কম হয়েছিল, তেমনই পাটের গুণগত মানও খুব খারাপ হয়েছিল। তার উপরে পাটের দামও কম ছিল। যার জেরে গত বছরে চরম বিপাকে পড়েছিলেন মুর্শিদাবাদের পাট চাষিরা। ফলে গত বছর কম দামে যেমন গরিব কৃষকদের পাট বিক্রি করতে হয়েছে, তেমনই অবস্থা সম্পন্ন কৃষকের ঘরে গত বছরের পাট এ বছরও মজুত রয়েছে। এ সবের পরেও লাভের আশায় চাষিরা পাট চাষ করেছেন।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাবরই জেলায় ১ লক্ষ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। ২০২১ সালে পাট চাষে লাভ হওয়ায় ২০২২ সালে এই জেলায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল।