প্রতীকী চিত্র
সেপ্টেম্বর জুড়ে সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। শেষ ভাদ্রের তালপাকা গরমে আর যাই হোক খেতের মাটি শুকিয়ে সবে জো আসছে। রবি ফসল বোনার চমৎকার আবহওয়ায় খুশি চাষিরাও। বিশেষ করে শীতকালীন আনাজ চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দেখে অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন কাঁচা আনাজের দাম এবার অন্তত কমবে। ঠিক সেই সময়ে ফের নিম্নচাপের সতর্কতায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সকলে।
চাষিরা জানাচ্ছেন, এ বারে সেই মে মাসের আমপানের সময় থেকে লাগাতার বৃষ্টির জেরে নাজেহাল তাঁরা। বিশেষ করে নিচু জমিতে বর্ষার জল জমে নিদারুণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেক চাষি। অতিবৃষ্টির দাপটে এ বারের বর্ষায় পাট ছাড়া বাকি সব ফসলই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আনাজের। যার ফলে বাজারে আকাশছোঁয়া দাম সব রকম আনাজের। জমিতে জল জমার কারণে মরসুমি আনাজ থেকে ফুল, ফল জমিতে পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি অস্বভাবিক বর্ষা হয়েছে এবার। একের পর এক নিম্নচাপের জেরে ফসলের খেত কাদায় মাখামাখি। সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র রোদে সবে জমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। এমন সময়ে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ঘিরে জেলায় জেলায় কৃষি দফতরের কাছে হাওয়া অফিসের সতর্কবার্তা পৌঁছানোয় প্রমাদ গুনছেন চাষি থেকে কৃষিকর্তা, সবাই।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০-২২ সেপ্টেম্বর দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই সতর্কবার্তা দেখেই ভয় পাচ্ছেন জেলার চাষিরা। কারণ, শীতকালীন আনাজ চাষের শুরুটা অগস্টের মাঝামাঝি থেকে হয়ে যাওয়ার কথা যা জলদি জাতের শীতকালীন চাষ বলে পরিচিত। সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জলদি আনাজ বোনার পর্ব শেষ হয়। পুজো নাগাদ বাজারে নতুন ফুলকপি, পালং শাক, মুলো ইত্যাদি আসতে শুরু করে দেয়।
লাগাতার বৃষ্টির জেরে এবার জলদি রবিচাষের জন্য জমি সে ভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তেমনই বর্ষাকালীন আনাজেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ প্রতিদিনের বাজারে আনাজের আগুন দাম। চাষিরা জানাচ্ছেন, সেই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিশেষ করে বদলাতে শুরু করেছে। রোদের তাতে জমিত শীতের আনাজ চাষ করার উপযুক্ত হচ্ছে ক্রমশ। নদিয়ার চাষিদের কথায় এতদিন পর জমিতে জল শুকিয়েছে। ফলে জমিতে সবে ‘জো’ আসছে। কিন্তু ভয়টা কোথায়?
তাতে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এমনিতেই বর্ষাকালে নিচু জমিতে জল জমে। নদিয়ায় নদী তীরবর্তী জমিতে যেখানে আনাজ ভাল হয় সে সব জমি নদীর জলস্তর বেড়ে থাকায় এতদিন জলমগ্ন ছিল। জলদি জাতের শীতকালীন আনাজ চাষের উপযুক্ত সময় ইতিমধ্যেই পার হয়ে যেতে বসেছে। এমন সময়ে সবে যখন জমি উপযুক্ত হচ্ছে তখন ফের নিম্নচাপে যদি নদীপাড়ের জমি আবার জলমগ্ন হয় তাহলে আনাজের উৎপাদনে ঘাটতি হতে পারে। যার প্রভাব অনিবার্য ভাবে বাজারে পড়বেই। যদিও কৃষিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “শনিবার ফের একটি সতর্ক বার্তা এসেছে। যাতে বলা হয়েছে হয়তো ওই নিম্নচাপ উত্তরবঙ্গের দিকে ঘুরে যেতে পারে।”