Maoist

নকশাল হতে নারাজ বলেই খুন, দাবি স্ত্রীর

পাটিকাবাড়ি এলাকার ডোবপাড়ায় রাস্তাতেই গুলি করে কুপিয়ে তাঁদের খুন করা হয়। আরও কয়েক জনের সঙ্গে পালানোর সময়ে আকসারকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

সন্দীপ পাল

নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২১ ০৬:৩১
Share:

নিহত মহিউদ্দিন দফাদারের স্ত্রী-সন্তান (বাঁ দিকে) ও তেঁতুল দফাদারের স্ত্রী-ছেলেমেয়ে। নিজস্ব চিত্র।

পাটিকাবাড়িতে দুই যুবক খুনের ঘটনায় তাদেরি সঙ্গী আকসার সেখকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোমবার তাকে কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হলে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

Advertisement

রবিবার সকালে এই আকসারের সঙ্গেই মোটরবাইকে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন ধনঞ্জয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধাপারিয়া গ্রামের বাসিন্দা বছর তেত্রিশের তেঁতুল দফাদার (৩৩) ও বছর চব্বিশের মহিউদ্দিন দফাদার। পাটিকাবাড়ি এলাকার ডোবপাড়ায় রাস্তাতেই গুলি করে কুপিয়ে তাঁদের খুন করা হয়। আরও কয়েক জনের সঙ্গে পালানোর সময়ে আকসারকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামের বাসিন্দারা। কার কথাবার্তায় অসঙ্গতি দেখে রাতেই পুলিস তাকে গ্রেফতার করে। তবে কী কারনে এই তা স্পষ্ট হয়নি। সোমবার রাত পর্যন্ত আর কাউকে ধরতেও পারেনি পুলিশ।

এ দিনও ধাপারিয়া গ্রাম ছিল দুই যুবকের মৃত্যুশোকে থমথমে। গ্রামের অনেকেরই প্রশ্ন, এর পিছনে কি হাত আছে মাওবাদীদের? এই এলাকায় এক সময়ে নকশালপন্থী তৎপরতা ছিল, পরে তা স্তিমিত হয়ে যায়।

Advertisement

তেঁতুলের পরিবারেরও অনেকে মনে করেন, এলাকায় এখনও কেউ কেউ রয়েছেন যারা নকশালপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে তেঁতুলও যে যুক্ত ছিলেন তা তাঁরা মানতে চাননি। তেঁতুল দফাদারের স্ত্রী আমানুর বিবি দাবি করেন, “ও ওই সব নকশাল করত না। তবে এলাকার অনেকেই রয়েছে যারা ওর সঙ্গে যোগাযোগ করত নকশাল করার জন্য। ও রাজি হয়নি বলেই ওকে খুন হতে হল।” তবে কারা তেঁতুলের সঙ্গে যোগাযোগ করত তিনি বলতে পারেননি।

আমানুর বলেন, “রবিবার সকালে ও মাঠে কাজ করকে গিয়েছিল। হঠাৎ ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ি ফেরে। আকসার ফোন করেছিল। সেই ফোন পেয়েই ‘ফিরতে বেলা হবে’ বলে ও তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায়। তার পর খবর এল, খুন হয়েছে।”

বয়সে অনেকটা ছোট মহিউদ্দিন বিয়ে করেছিলেন বছর দেড়েক আগে। বাড়িতেই ছোট মুদিখানা দোকান করে তিনি সংসার চালাতেন। চার মাসের একটি ছেলে রয়েছে তাঁর। গ্রামের প্রায় সকলেই বলছেন, ছোট থেকেই তিনি শান্ত স্বভাবের। গ্রামে এক সময়ে নকশালপন্থীদের দাপট ছিল। তাদের নানা গানের অনুষ্ঠান হত। সেই সব অনুষ্ঠানে অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দু’চার বার তিনি গিয়েছিলেন ঠিকই, তবে কোনও দিনই নকশালপন্থীদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। বরং তেঁতুলের মত মহিউদ্দিনও বর্তমানে তৃণমূলের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। তাঁর পরিবারের অনেকেরই ধারণা, তেঁতুলের সঙ্গে গিয়েছিলেন বলেই তাঁকে খুন হতে হয়েছে।

বাড়ির এককোণে ছেলেকে নিয়ে বসে মহিউদ্দিনের স্ত্রী রাজশ্রী খাতুন বিবি বলেন, “ওরা ডেকে নিয়ে গেল বলেই ও গেল। ওই আকসার এসেই ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে দিল ওকে। এখন এই দুধের শিশু নিয়ে কী ভাবে বেঁচে থাকব? কী ভাবে দিন চলবে?”

কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার ঈশানী পাল বলেন, “ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্থানীয় কয়েক জনের নাম জানা গিয়েছে। তারা সকলেই পলাতক। খুনের কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। তদন্ত চলছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement