শোকগ্রস্ত রিয়াজুদ্দিন মণ্ডলের ররিবার। নিজস্ব চিত্র
মাস দেড়েক আগে জ্বর হওয়ার পর থেকেই এলোমেলো কথা বলতে শুরু করেছিলেন তিনি। সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন সবাইকে। একমাত্র সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন অভিভাবকেরা। চিকিৎসা করানো শুরু করেছিলেন। কিন্তু চিকিৎসার মাঝে এমন মর্মান্তিক পরিণতি সকলের ভাবনার বাইরে ছিল।
গত মঙ্গলবার রিয়াজুদ্দিন মণ্ডল নামে বছর কুড়ির ওই যুবককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেছিলেন বাবা মোহর আলি মণ্ডল। আর তার পর দিন অর্থাৎ বুধবার হাসপাতালের সাত তলার ওই ঘর থেকে ঝাঁপ মেরে আত্মঘাতী হন রিয়াজুদ্দিন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মাস দেড়েক আগে ওই জ্বরের পরেই ‘অটোইমিউন এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। মনোরোগের লক্ষণও দেখা দিয়েছিল। স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় ভুগতে শুরু করেছিলেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বুধবার তাঁর বাবা যখন রক্ত পরীক্ষার জায়গা দেখতে যান তখনই হঠাৎ হাসপাতালের শয্যা থেকে উঠে দৌড়ে জানলায় উঠে নীচে লাফ দেন রিয়াজুদ্দিন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁর বাড়ি রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দৌলা পশ্চিমপাড়ায়। তিনি এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। পড়তেন ধানতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃতদেহ গ্রামের কবরস্থানেই মাটি দেওয়া হয়। গ্রামের লোক বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভিড় করেছিলেন বাড়িতে। এসেছিলেন আত্মীয়েরা। বাবা মোহরালি মণ্ডল কাঁদতে-কাঁদতে বলেন, “আমাকে রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে দেখি, ছেলে বেডে নেই। জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারি, সে জানাল দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। ছুটে যাই। কিন্তু তার দেহ আমাকে দেখতে দেওয়া হয়নি। অসুস্থ ছেলেকে সুস্থ করার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরিয়ে আনতে পারলাম না।” জেঠিমা আলেয়া মণ্ডলের কথায়, “আমাদের ঘরেই বেশি থাকত। হাসপাতালে যাওয়ার আগের রাতেও আমাদের সঙ্গেই শুয়েছিল।” তাঁর অভিযোগ, “হাসপাতালের নার্স, কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেননি। ওঁরা একটু সতর্ক থাকলে ছেলেটা এ ভাবে মরতে পারত না।’’ তাঁর স্কুলের শিক্ষকেরাও এ দিন বাড়ি এসেছিলেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা বলেন, “খুব ভাল ছেলে ছিল। কিছু দিন অসুস্থ থাকায় স্কুলে আসতে পারছিল না। তবে উচ্চ মাধ্যমিকের ফর্মফিলাপ করেছিল। ওর বাবা-মাকে সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই।” সহপাঠী ইমানুল হক চোখের জলে ভেসে বলে, ‘‘ এক সঙ্গে থাকতাম। কিছুদিন থেকে ওর মাথার সমস্যা হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটু দায়িত্বশীল হলে ও আমাদের ছেড়ে চলে যেত না।”