বাড়ি ফেরা।— নিজস্ব চিত্র
ভোটারদের বেশি করে বুথমুখী করতে নির্বাচন কমিশনের তৎপরতার সীমা নেই। রেডিও-টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে কমিশন ভোটারদের বুথমুখী হওয়ার আবেদন জানাচ্ছে অহরহ। ইতিমধ্যে ভোটের তিন দফা শেষ হয়েছে। প্রতিটি দফাতেই ৮০ শতাংশের উপর ভোট পড়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন চিন্তায় পড়েছে মুর্শিদাবাদ নিয়ে। কারণ, এ জেলার বিরাট সংখ্যক মানুষ পেটের টানে ভিন জেলায় বা ভিন রাজ্যে থাকেন। ভরা বৈশাখের গরমে গাঁটের ক়ড়ি খরচ করে তাঁরা ভোটের দিন বাড়ি ফিরবেন তো? এই চিন্তাতেই আচ্ছন্ন রাজনৈতিক দলগুলি। সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও। তবে বুধবার ভোটের আগের দিন জেলার পরিযায়ী ভোটারদের একাংশ বাড়ি ফিরেছেন। অনেকেরই আশা, আজ, বৃহস্পতিবার ভোটের দিন আরও অনেকেই বাড়ি ফিরবেন। সচিত্র পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন।
জেলায় ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৭ লক্ষ। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২৪ লক্ষ। বছর খানেক আগে একটি বেসরকারি সংস্থা কাজের সূত্রে জেলার বাইরে থাকা লোকজনের বিষয়ে একটি সমীক্ষা করে। তাতে দেখা যায়, প্রায় ৩ লক্ষ ভোটার ভিন জেলা বা ভিন রাজ্যে কাজ করেন। ডোমকল, জঙ্গিপুর, ভগবানগোলা, লালগোলা, সুতি, জলঙ্গি— এই এলাকার মানুষই বেশি পরিমানে কাজের সূত্রে জেলা ছাড়েন। কলকাতা তো বটেই চেন্নাই, মুম্বই, দিল্লির মত দেশের বড় বড় শহরে মুর্শিদাবাদের অজস্র মানুষ রাজমিস্ত্রি, দিনমজুরি, হকারি প্রভৃতি কাজ করে থাকেন।
এই ভোটারদের নিয়ে চিন্তায় সব পক্ষই। চেষ্টা করছে, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে। রঘুনাথগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী আখরুজ্জামানের কেন্দ্রের বহু ভোটারই বাইরে থাকেন। তিনি এই ভোটারদের নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। তাঁর কথায়, “গ্রামে গ্রামে কর্মীরা বাইরে কাজ করেন, এমন ভোটারদের সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। ওই ভোটারদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।’’
কী ভাবে? বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাই ওই ভোটারদের মেসেজ পাঠিয়ে ভোটে বাড়ি ফেরার আর্জি জানাচ্ছেন।
এক প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট অবশ্য জানাচ্ছেন, বিভিন্ন কোম্পানি মেসেজ পাঠানোর ক্ষেত্রে কম পয়সায় নানা রকম অফার দিয়ে থাকে। সেই স্কিম ব্যবহার করে পরিযায়ী ভোটারদের বা়ড়ি ফেরার আহ্বান জানিয়ে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। তবে সেখানে প্রার্থীর নাম উল্লখ করা হচ্ছে না। এতে অবশ্য কাজও হচ্ছে। বুধবার দুপুর ৩টে নাগাদ বর্ধমান থেকে বাড়ি ফিরেছেন বড়শিমুলের অন্তত ২০ জন। তাদেরই একজন মজিবুর রহমান বলছেন ,“একে তো ট্রেনে ভিড়। মুরারইতে নেমে গাড়ি নেই। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরেছি লরিতে চেপে।’’
ভিন রাজ্যে শ্রমিকদের বাড়ির লোকজনও চাইছেন তাঁরা যেন ভোটের দিন বাড়ি ফেরেন। কেউ মেসেজ করছেন, ‘‘সাজিরুল, ২১ তারিখ ভোট আছে। তোরা তিন জন একদিন আগে চলে আসবি। বড় চাচাকে বলিস আসতে। তাকে লক্ষীজোলা যেতে হবে।’’
সাগরদিঘির কংগ্রেস প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মনে করেন, “রাজনৈতিক দলের সংগঠনগুলিরই উচিত বাইরে থাকা ভোটারদের গ্রামে ফিরিয়ে এনে ভোট দেওয়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া। ভোট প্রচারে গিয়ে কর্মীদের মাধ্যমে বাড়ির লোককে অনুরোধ করা হয়েছে। তাতে এই গরমে ভোটারদের বাড়ি ফেরানো কতটা সম্ভব হবে তা জানি না।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফরাক্কার আবুল হাসনাত খান বলেন, “যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হচ্ছে। অন্য রাজ্য থেকে সবাইকে ফেরানো যাবে না।’’