প্রতীকী ছবি।
প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে চুপিসাড়ে নাবালিকার বিয়ে চলছেই। শুধু তা-ই নয় অপরিণত অবস্থায় মা'ও হচ্ছে নাবালিকারা। যার ফলস্বরূপ অপুষ্ট শিশুর জন্ম, বিবাহ বিচ্ছেদ কিংবা বধু নির্যাতনের মত বিষয়গুলি সামনে আসছে। চলতি কথায় ‘লাল বাচ্চা’ বা অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কমলেও জেলার বিভিন্ন ব্লকে এখনও রয়েছে এই ধরনের শিশু। এমন অসুখে বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
জেলায় এই ধরনের শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশো। আইসিডিএস কর্মী থেকে আধিকারিক সকলের মতেই এই ধরনের অধিকাংশ শিশুদের মা নাবালিকা বিয়ের শিকার। শুধু তা-ই নয় অপরিণত অবস্থায় সন্তান প্রসবের কারণ এই ধরনের শিশুর ভূমিষ্ট হয়।
চিকিৎসকেরাও বলছেন মেয়েরা সাধারণত ২১ বছরের আগে সন্তান প্রসবের জন্য শারীরিক ভাবে তৈরি থাকে না। কিন্তু বাল্যবিবাহের কুফলের কারণে খুব অল্প বয়সেই অনেক তরুণী মা হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই সমস্ত অপরিণত মায়েদের কোলে আসে অপুষ্ট সন্তান।
জেলার আনাচে-কানাচেতে প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে চুপিসাড়ে নাবালিকার বিয়ে চলছেই। ১৫-১৬ বছর বয়সেই অনেক তরুণী মা হচ্ছেন। একই রকম ভাবে ৩০-৩৫ এর কোঠায় গিয়ে তারা ‘ঠাকুমা’ পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।
আইসিডিএস প্রকল্পের জেলার এক প্রকল্প আধিকারিক বলছেন, ‘‘পরিণত গাছে ভালো ফল মেলে, মায়েদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এক।’’ প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বাল্যবিবাহ হলেও আইসিডিএস, আশা কর্মীরা তৎপর অপরিণত অবস্থায় মা হওয়া ঠেকাতে।
গ্রাম স্তরে ভিএলসিপিসি বৈঠকে কিশোরীদের ও অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া তরুণীদেরও এই বিষয়ে সচেতন করার কাজ করছে আইসিডিএস, আশা কর্মী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাও। হরিহরপাড়ার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুল লস্কর বলছেন, ‘‘গ্রামে গঞ্জে লুকিয়ে চুরিয়ে অল্প বয়সী মেয়েদের বিয় চলছেই। অনেকেই অল্প বয়সে মা হতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে শিশু, মা’কে বাঁচানোটাই কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে আশা, আইসিডিএস কর্মীদের এই বিষয়ে সচেতন করতে বলা হয়েছে।’’
শুধু তা-ই নয় পুলিশের কর্তা, ম্যারেজ ও ডিভোর্স রেজিস্ট্রার, আইনজীবীরাও বলছেন অধিকাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ, গার্হস্থ্য কলহের মুল কারণ বাল্যবিবাহ। হরিহরপাড়া, নওদা, ডোমকল সহ জেলার বিভিন্ন থানায় এমনকি জেলার বিভিন্ন আদালতে প্রায়শই বধু নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের বা মামলা করতে আসেন। পুলিশের কর্তারা বলছেন তাদের অধিকাংশই নাবালিকার বিয়ের শিকার। আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস নামে এক আইনজীবী (এপিপি) বলেন, ‘‘নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে এবং সন্তান প্রসবের পরে অধিকাংশ মেয়ের শরীর ভেঙে পড়ে। বধু নির্যাতন ও বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা লড়তে গিয়ে আমরা এটা হামেসাই লক্ষ্য করি।’’ ফলে বহু রোগ এবং সমস্যার দাওয়াই হিসেবে বাল্যবিবাহ রদ অত্যন্ত জরুরি বলেই মত প্রশাসনের কর্তাদেরও।