প্রতীকী ছবি।
গরিব মানুষের একমাত্র ভরসা রেলপথ। লকডাউনে তা বন্ধ। অথচ, জেলার বাইরে কলকাতায় বা অন্য জেলার মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার জন্য অধিকাংশ মানুষের অবলম্বন সেই ট্রেন। জেলায় অনেক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা মেলে না। চিকিৎসার জন্য মূলত কলকাতা ছুটতে হয়। লকডাউনে কলকাতা পর্যন্ত আসতে কালঘাম ছুটছে রোগীর। বিশেষ করে বিপদের মুখে পড়়তে হচ্ছে গরিব মানুষকে। অন্য অনেক রোগের মতো চোখ ও কানের একটু জটিল সমস্যায় ভোগা রোগীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকছে না।
যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, তাঁদের আবার সমস্যা হল চিকিৎসক পাওয়া। অর্থ থাকলেও তাঁরা পছন্দের চিকিৎসককে দেখাতে পারছেন না। কেউ-কেউ অনলাইনে পরামর্শ নিচ্ছেন, অনেকে আবার সেটাও পারছেন না। নামী চিকিৎসকদের বদলে তাঁরা গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কখনও আবার অনেকে টোটকার উপর ভরসা করেছেন। লকডাউনের কয়েক মাস অধিকাংশ রোগীর এ ভাবে কেটেছে।
বছর দেড়়েক আগে চোখে অপারেশন করিয়েছিলেন চাকদহ থানার শিমুরালির এক বাসিন্দা। তিনি কলকাতার এক চক্ষু চিকিৎসককে দেখাতেন। ওই চিকিৎসক শিমুরালি বাজারের একটি চেম্বারে বসতেন। তাঁর অধীনেই কল্যাণীর একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তাঁর বাঁ-চোখের অপারেশন হয়েছিল। লকডাউনের জেরে ওই চিকিৎসক শিমুরালির চেম্বারে এখন আসতে পারছেন না। যার কারনে আজও ওই বৃদ্ধার ডান চোখ অপারেশন করানো সম্ভব হয়নি।
ওই বৃদ্ধা বলেন, “যে সময়ে ডান চোখের অপারেশন করাবো ভেবেছিলাম সেই সময়ে আমার সুগার ধরা পরে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে সুগার কমলে অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু লকডাউন শুরু হয়ে গেল। তার পর আর কিছুই করা সম্ভব হয়নি। জানি না কবে আবার দ্বিতীয় চোখের অপারেশন করতে পারব।”
বেশ কয়েক দিন ধরে কানে কিছু শুনতে পারছিলে না গাংনাপুরের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির মাছ বিক্রেতা। করোনার ভয়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে যেতে পারছিলেন না। শেষে মোটা টাকা ফি দিয়ে প্রাইভেটে চিকিৎসা করিয়েছেন। কানের ব্যথায় কঁকিয়ে উঠছিল ধানতলার বছর পাঁচেকের শিশুটি। লকডাউনে গাড়ি না চলায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি পরিবারের লোকেরা। শেষে এলাকার কয়েক জন বাসিন্দার কথা শুনে টোটকা চিকিৎসার শরণাপন্ন হন অভিভাবকেরা। তাতে ঘটনাচক্রে মেয়েটির কান্না বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আসল রোগ আদৌ কমেছে কিনা বা তার ঠিক কী হয়েছিল কিছুই জানা যায়নি।
রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক সুজিত মণ্ডল বলেন, “লকডাউনে যানবাহন বন্ধ। বহিঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। অনেকে হাসপাতালে আসতে ভয় পাচ্ছেন। অপারেশন করাতে ভয় পাচ্ছেন।” নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক ধ্রুবজ্যোতি পাত্রের কথায়, “লকডাউনের সময়ে বহিঃবিভাগে আলাদা করে কিছু হত না। এক সঙ্গে কয়েক জন চিকিৎসক বসতেন, তাঁরা সব রোগের চিকিৎসা করতেন। এপ্রিল মাসের শেষ দিক থেকে বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তারেরা আলাদা-আলাদা বসে রোগী দেখা আবার শুরু করেছেন। কিন্তু এখনও রোগী কম। কমবেশি পঞ্চাশ জন রোগী হচ্ছে।’’