গুলিবিদ্ধ। নিজস্ব চিত্র
বিয়েবাড়িতে বরযাত্রী নামিয়ে ফাঁকা বাস দাঁড়িয়ে ছিল সরু রাস্তার ধারে। সেই বাস সরানো নিয়ে বচসার জেরে গুলি করা হল বরের দাদার পায়ে। তিনি এখন কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি। আজ, শুক্রবার তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়নি। কেউ গ্রেফতারও হয়নি।
বুধবার রাতে হাঁসখালির ভায়নায় ঘটনাটি ঘটে। গুলিতে জখম চণ্ডীচরণ বিশ্বাস বিএসএফ জওয়ান, কর্মস্থল ত্রিপুরায়। বিবাহিত, বছর তিনেকের যমজ মেয়েও আছে। আদত বাড়ি নবদ্বীপের তেঘড়িপাড়া কলাতলায়। চণ্ডীচরণের ভাই, সিআরপি জওয়ান চন্দনের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছিল ভায়নার চাষি সুভাষ বিশ্বাসের মেয়ে অপর্ণার। চন্দন জানান, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তাঁরা নবদ্বীপ থেকে ভায়নার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। একটি ছোট গাড়িতে তিনি ও সাত জন ছিলাম। একটি বাসে আত্মীয়-পরিজন মিলিয়ে জনা আশি বরযাত্রী ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে বিয়ের মূল অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে মিটেও যায়।
রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ যখন বাসি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে, হঠাৎই ভিতরে খবর আসে বরের দাদাকে কারা নাকি মারধর করছে। বরযাত্রীরা হইহই করে বেরিয়ে এসে দেখেন, বাড়ি থেকে সামান্য দূরে রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন চণ্ডীচরণ। মাথা ফেটে গিয়েছে। সারা শরীর, পা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তাঁকে বরের গাড়িতেই স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করে পাঠানো হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখান থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।
কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। চণ্ডীচরণের জেঠা গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, “যখন ঘটনাটি ঘটে, আমরা কেউই ছিলাম না। চণ্ডী গিয়েছিল বাসের ড্রাইভার আর খালাসির জন্য খাবার নিয়ে। কেন এই হামলা, আমরা বুঝতে পারছি না।” বিয়ের ছবি তুলতে নবদ্বীপ থেকে তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলেন রাজু মণ্ডল। তিনি বলেন, “যেটুকু জেনেছি, চণ্ডীদা যখন বাসের চালক আর খালাসির জন্য খাবার নিয়ে যান, উল্টো দিক থেকে একটি গাড়ি আসছিল। গাড়ির লোকেরা বাস সরাতে বলে। চালক বাস সরানোর সময়েই শুরু হয় বচসা। তখনই হঠাৎ এক জন পিস্তলের বাট দিয়ে চণ্ডীদার মাথার মারে। উনি পড়ে গেলে ওঁকে লক্ষ্য করে দুটো গুলি ছুড়ে ওরা চলে যায়।” একটি গুলি ডান পা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেলেও অন্যটি পা ফুঁড়ে ঢুকে গিয়েছে।
মাঝরাতেই নতুন বৌ নিয়ে সকলে নবদ্বীপ ফিরে আসেন। জখম চণ্ডীকে নিয়ে কলকাতায় চলে যান তাঁর বাবা চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। বাড়ির সকলে চিন্তায় রয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে আসা চন্দনের আক্ষেপ, “বিয়ের সব আনন্দই নষ্ট হয়ে গেল। এখন বৌভাতের কোনও অনুষ্ঠান হবে না। আগে দাদা সুস্থ হোক’”
তবে দুষ্কৃতীদের ভয়ে হোক বা অন্য কোনও কারণে, মুখে কুলুপ এঁটেছেন মেয়ের বাড়ির লোকজন। এ বিষয়ে তাঁরা কোনও কথাই বলতে চাননি। পুলিশ জানিয়েছে, কেউ অভিযোগ দায়ের না করলেও তারা নিজেদের মতো করে খোঁজখবর নিচ্ছে।