—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দুই শিবিরে এ বার প্রস্তুতিটা ছিল অন্য বারের চেয়ে একেবারে অন্য রকম। চিরশত্রুতার বদলে ভাই-ভাই হাওয়া। আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে দু’পক্ষের সমর্থকেরাই টিফো নিয়ে মাঠে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
কিন্তু শনিবার হঠাৎই খবর এল, ‘খেলা হবে না’! কলকাতা পুলিশ নিরাপত্তা দিতে তাদের অপারগতার কথা জানানোয় ডুরান্ড কাপে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের রবিবাসরীয় ডার্বি বাতিল। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছে মোহন-ইস্ট দুই শিবিরই। নদিয়া দুই ফ্যান ক্লাবের বহু সদস্যই ক্ষোভে ফুঁসছেন।
নবদ্বীপ ইস্টবেঙ্গল ফ্যানস ক্লাবের সুরজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “নবদ্বীপ থেকে রবিবার বেশ কয়েক জনের যাওয়ার কথা ছিল মাঠে। সঙ্গে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা টিফো। দুই প্রান্তে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের জার্সি পড়া সমর্থকের ছবি। মাঝে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ। আশ্চর্য লাগছে, যৌথ ভাবে প্রতিবাদ হবে বলে খেলাটাই বন্ধ করে দিল?”
নবদ্বীপ মেরিনার্সের সম্পাদক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “খেলার মাঠে এ এক নজিরবিহীন ঘটনা। অত্যন্ত হতাশাজনক সিদ্ধান্ত। আমাদের অন্তত জনা কুড়ি মাঠে যেত বলে ঠিক হয়েছিল। এখন অন্য রকম ভাবা হচ্ছে। রাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন: খেলা হতে না দিয়ে প্রতিবাদ কত দিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে?
আজ, রবিবার কলকাতায় দু’দলের সমর্থকেরা এক সঙ্গে প্রতিবাদে শামিল হবেন বলেই ঠিক হয়েছে। নবদ্বীপ মেরিনার্সের প্রতিনিধি হিসাবে কলকাতায় যাচ্ছেন দেবমাল্য দাস। তাঁর কথায়, “প্রশাসন ভয় পেয়েছে বলেই এমন অ-খেলোয়াড়ি সিদ্ধান্ত। মাঠে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল একে অপরের প্রবল প্রতিপক্ষ। কিন্তু যে সমাজে আমরা সবাই বাস করি তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনে আমরা এককাট্টা। তাতেই কি এই ভয়? না হলে এমন অদ্ভুত যুক্তি দিয়ে কেউ ডার্বি বন্ধ করে!”
ইউনাইটেড বাঙালস-এর সম্পাদক তুহিন গোস্বামী বলেন “আমরা আগে মানুষ, তার পরে ইস্টবেঙ্গল কিংবা মোহনবাগান। সেই মানুষ হিসাবে আরজি করের ঘৃণ্য কাণ্ডের প্রতিবাদ না করলে অন্যায় হত। প্রত্যেকের বাড়িতে মা-দিদি-বোন-মেয়ে আছেন। তাঁদের সকলের জন্য এই প্রতিবাদ ভীষণ দরকার। রাজ্য জুড়ে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ফ্যানেরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।” তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, খেলা বন্ধ করে হয়তো ভালই হল। যে প্রতিবাদ শুধু খেলার মাঠে গ্যালারির মধ্যে আটকে থাকত, তা এ বার গোটা রাজ্য জুড়ে পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়বে।
সেই জন্য নতুন করে তৈরি শ্লোগানের ঝাঁঝ কিন্তু ঢের বেশি— “ফুটবলের গান, বদলে স্লোগান, আজ মাঠে মাঠে। আমরা জাস্টিস চাই, না হলে ছাড়ব না তো ভাই, স্লোগান চলবে রাস্তাঘাটে।” কিংবা— “প্রশাসন চুপ, বন্ধ সব মুখ, উত্তর তারা দেবে না। আমরা ছিনিয়ে নেব জয়, পাচ্ছি না তো ভয়, জাস্টিস ছাড়া নড়ব না।”