ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজোর মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার জেরে কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত নদিয়া জেলা পুলিশ। এত দিন মণ্ডপের ভিতরের ভিড় কী করে সামাল দেওয়া হবে তা নিয়েই যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার হাইকোর্টের রায় সবটাই বদলে দিয়েছে। এবার মণ্ডপের ভিতরের ভিড় সামাল দেওয়ার পরিবর্তে বাইরের ভিড়ই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশের কাছে। যদিও সেই ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি জেলা পুলিশ। থানাগুলিতেও নতুন করে কোনও নির্দেশিকা পাঠানো হয়নি। জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি, হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি তাঁরা এখনও হাতে পান নি। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য থেকেও কোনও ‘গাইডলাইন’ সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। জেলার পুলিশকর্তারা সেই গাইডলাইনের অপেক্ষায় আছেন।
সর্বত্র না হলেও নদিয়ায় বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় আকারের পুজো হয়। চাকদহ, বাদকুল্লা, বেথুয়াডহরি বা মাজদিয়ায় বেশ কিছু বড় পুজো হয়। পুজোর সংখ্যাও অনেক। সেই সব পুজো মণ্ডপগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে। বিগত বছরগুলিতে সেই ভিড় সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হত পুলিশ-প্রশাসনকে। করোনাকালে কাজটা আরও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের মত করে এক রকম পরিকল্পনাও নিয়েছিল কৃ্ষ্ণনগর ও রানাঘাট জেলা পুলিশ। কিন্তু হাইকোর্টর রায়ের ফলে সেই পরিকল্পনা তারা বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। এ বার মণ্ডপের ভিতরের পরিবর্তে বাইরের ভিড় সামাল দেওয়াই হয়ে দাঁড়াচ্ছে মূল কাজ। বিভিন্ন এলাকার পুজোকর্তাদের ধারণা, বড় পুজোর ব্যারিকেডের বাইরে ভিড় জমবে। যে সব জায়গায় পুজো দেখানোর জন্য ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’ লাগানো হচ্ছে, সেখানেও ভিড় হতে পারে। জেলা পুলিশের এখটি সূত্রের দাবি, মণ্ডপের বাইরের ভিড় সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশিকা ঠিক কী, রায়ের প্রতিলিপি হাতে না আসায় তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তার উপর রাজ্যের নির্দেশিকার জন্য অপেক্ষা তো আছেই।
তবে জেলা পুলিশ ইতিমধ্যে নিজেদের মতো করে কিছু পরিকল্পনা করতে শুরু করেছে। যেমন, রাস্তার ধারে কোনও অস্থায়ী দোকান বা স্টল বসতে দেওয়া হবে না। কোনও মেলাও বসবে না। পুজোমণ্ডপে ঢোকা যাবে না, আবার রাস্তায় খাওয়া-দাওয়া করারও কোনও জায়গা নেই, এতে নিরাশ হয়ে অনেকে পুজোর দিনগুলোয় বাড়ি থেকে না-ও বেরোতে পারেন বলে পুলিশ কর্তাদের আশা। আবার নাকাশিপাড়া থানা এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রধান রাস্তা থেকে মণ্ডপে ঢোকার রাস্তার মুখে তারা আরও একটা করে ব্যারিকেড করবে। সেখানে হাজির থাকবেন পুলিশ অফিসারেরা। এক সঙ্গে পাঁচ-ছ’জন মণ্ডপের সামনের ব্যারিকেড পর্যন্ত যেতে দেওয়া হবে। তারা ফিরে আসার পর আবার পাঁচ-ছ’জনকে ছাড়া হবে।
অফিসার, কনস্টেবল ও সিভিক ভল্যান্টিয়ার মিলিয়ে অতিরিক্ত আরও প্রায় একশো পুলিশকর্মী পাচ্ছে নাকাশিপাড়া থানা। তাহেরপুর থানা পাচ্ছে প্রায় দু’শো অতিরিক্ত পুলিশকর্মী। চাকদহ থানার নিজস্ব পুলিশকর্মীর সংখ্যা এমনিতেই অপেক্ষাকৃত বেশি থাকায় তারা ৭০ থেকে ৭৫ জন বেশি পাচ্ছে। রাজ্য থেকে যেমন অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হচ্ছে, তেমনই জেলার নিজস্ব পুলিশ লাইন থেকেও বাড়তি বাহিনী ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, “আমাদের চাহিদা মতো রাজ্য থেকে অতিরিক্ত বাহিনী পাচ্ছি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত রকম পদক্ষেপই করা হচ্ছে।” রাতে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, “বিভিন্ন পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যও নেওয়া হবে। কী ভাবে ব্যারিকেডের বাইরে ভিড় সামাল দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”