প্রতীকী ছবি
সামনেই পুজো। কিন্তু এ বারে প্রতিমা শিল্পীদের কারখানায় সেই ব্যস্ততা নেই। সৌজন্যে করোনাভাইরাস। প্রতিমা শিল্পীরা জানান, অন্য বছরগুলিতে মহালয়ার সময় থেকে তাঁদের একপ্রকার নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না। কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে এমনিতেই গত মার্চ থেকে হাতে অন্য কোনও কাজ নেই। এ বারে দুর্গা প্রতিমার বরাত এসেছে দেরিতে। তার উপরে বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম উচ্চতার প্রতিমার বরাত যেমন এসেছে, তেমনই
কারুকার্য ছাড়াই সাদামাটা সাবেক প্রতিমার বরাত এসেছে। ফলে প্রতিমার খরচ ও কমেছে।
বহরমপুরের খাগড়ার স্বর্গধাম এলাকার প্রতিমা শিল্পী অসীম পাল বরাবরই ১২-১৩টি প্রতিমার বরাত পান। এবারে তিনি ৯টি প্রতিমার বরাত পেয়েছেন। বাজেট কমে যাওয়ার কারণে প্রতিমার উচ্চতাও যেমন ছোট করতে হচ্ছে, তেমনই প্রতিমার অন্য কারুকার্য এবার কম করতে হচ্ছে। অসীম পাল বলেন, ‘‘গত বছর ১ লক্ষ ৮০হাজার প্রতিমাও তৈরি করেছি। কিন্তু করোনার জেরে বাজেট কমে যাওয়ায় এবারে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকার প্রতিমার বরাত পেয়েছি। এছাড়া ৪০-৫০ হাজার টাকার প্রতিমাও রয়েছে।’’
বহরমপুরের অপর প্রতিমা শিল্পী সমর পাল একজন শ্রমিককে নিয়ে তাঁর কারখানায় প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। তিনি জানান, বছরভর লক্ষ্মী, গণেশ, লক্ষ্মীনারায়ণ, শীতলা, বিশ্বকর্মার মতো ৫০টি প্রতিমা তৈরির বরাত পাই। এ ছাড়া ১২টি দুর্গাপ্রতিমা তৈরির বরাত পাই। করোনা সংক্রমণের জেরে গত মার্চ মাস থেকে কোনও কাজ নেই।’’ তবে বরাবরের মতো এবারেও ১২টি দুর্গা প্রতিমার বরাত পেয়েছেন। কিন্তু পুজো কমিটিগুলি বাজেট কমানোর ফলে দুর্গা প্রতিমার উচ্চতা কমেছে। তাঁর দাবি, ‘‘বিগত বছরগুলিতে ১২-১৫ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছি। যার দাম ৪০-৫০টাকা পর্যন্ত পেয়েছি। আগে ২০হাজারের নিচে কোনও প্রতিমা তৈরি করিনি। কিন্তু এ বারে সর্বোচ্চ দাম ১৫ হাজার পেয়েছি। এবারে উদ্যোক্তারা প্রতিমার জন্য বাজেট খুবই কম রেখেছে। সেই মতো প্রতিমা তৈরি করতে হচ্ছে।’’
শহরের আর এক প্রতিমা শিল্পী গোরাচাঁদ পাল বলেন, ‘‘নোটবন্দির সময়ে আমাদের সমস্যা কিছুটা হয়েছিল। কিন্তু এ বারের মতো এত সমস্যায় পড়তে হয়নি। গত ৬-৭মাস ধরে আমাদের হাতে কোনও কাজ নেই। দুর্গা প্রতিমার বরাত পেলেও বাজেট অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। যার জেরে আমরা সমস্যায় পড়েছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘৩০-৩৫বছর আগে যেমন এক চালার সাবেকিয়ানা প্রতিমা তৈরি হত এবারে সেদিকেই ফিরতে হচ্ছে।’’
বহরমপুরের বিটি কলেজ বটতলা ভট্টাচার্যপাড়া দুর্গাপুজো কমিটি গত বছর ১ লক্ষ ৩০হাজার টাকা দিয়ে প্রতিমা তৈরি করেছিল। এবারে তাঁরা মাত্র ৩৫ হাজার টাকার এক চালার সাবেক দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক সুজয় সরকার বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির কারণে পুজোর বাজেট কাটছাঁট করতে হয়েছে। বিগত বছরগুলিতে থিমের পুজো করার কারণে প্রতিমার খরচও বেশি হত। কিন্ত এ বারে কম খরচে সাবেক প্রতিমা তৈরি করছি।’’