পুলিশের টহল। মঙ্গলবার বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হতে না হতেই খড়গ্রামে এক কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন। ডোমকল, রানিনগরে মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এ বারে পঞ্চায়েতেও নির্বাচনেও বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যের আরও ৬টি জেলার সঙ্গে মুর্শিদাবাদের পঞ্চায়েত নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে হওয়ার সম্ভাবনায় অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন জেলার বাসিন্দারা।
তবে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘এ রকম বিষয় আমার জানা নেই। আদালতের নির্দেশিকা এলে বোঝা যাবে।’’ বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহরায় বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে। আমাদের নেত্রী প্রথম থেকে সেই কথা বলেছেন। আমরা উন্নয়নকে সামনে রেখে ভোট করব। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকল বা থাকল না, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’’
বিজেপির দক্ষিণ মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘বামেদের ৩৪ বছর এবং তৃণমূলের এই এগারো বছর মিলিয়ে গত ৪৫ বছর ধরে এই জেলায় ভোটকে কেন্দ্র করে রক্তাক্ত হয়েছে, খুন হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়েছিলাম। আদালত মান্যতা দিয়েছে। আমরা চাই রাজ্য নির্বাচন কমিশন যেন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যথাযথ ব্যবহার করে।’’
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৮ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে সব থেকে ভোট হিংসার বলি হয়েছিল মুর্শিদাবাদে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের এক জন মাত্র খুন হন, সেটাও ডোমকলে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটে হিংসার জেরে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ও নওদায় দু’জন খুন হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ভগবানগোলায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে এক ভোটার খুন হয়েছেন। ফলে নির্বাচন এলেই মুর্শিদাবাদের সাধারণ মানুষের বুক কাঁপতে শুরু করে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নেই। তারা নিরপেক্ষ নয়। ফলে তাদের উপস্থিতিতে নির্বাচন হলে গন্ডগোল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট হলে গন্ডগোলের আশঙ্কা কম থাকে। সাগরদিঘিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে বিনা রক্তপাতে ভোট হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেটাই মানুষ চান।’’
তুচ্ছ ঘটনাকে সামনে রেখে মাঝে মধ্যেই অস্ত্র বের করতে দেখা যায় মুর্শিদাবাদের আনাচ কানাচে। আর ভোট এলে অস্ত্রের ঝনঝনানি এক লাফে এনেকটা বেড়ে যায়। বাম আমল বা তৃণমূল আমল, পঞ্চায়েত ভোট বা লোকসভা কিংবা বিধানসভা ভোট হোক খুনের সাক্ষী থেকে মুর্শিদাবাদ। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষে অনেক বাসিন্দাই।