Drop Out

উঁচু ক্লাসে ছাত্রের অভাব

মাঝপথে স্কুল ছেড়ে কাজে যোগ দেওয়া বা কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে চলে যাওয়াই এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক 

করিমপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০৪:২৬
Share:

আজ, বৃহস্পতিবার শুরু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। চলছে প্রস্তুতি। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য (ভিডিয়ো আছে)

সীমান্তের প্রায় সব স্কুলেই উঁচু ক্লাসে কমে যাচ্ছে ছাত্রসংখ্যা। এমন নয় যে, ছাত্ররা বেশি সংখ্যায় পাশ করতে অকৃতকার্য হচ্ছে। তাদের মাঝপথে স্কুল ছেড়ে কাজে যোগ দেওয়া বা কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে চলে যাওয়াই এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, পড়াশোনায় ন্যূনতম ডিগ্রি পাওয়ার তুলনায় অর্থ রোজগার শুরু করাকে বেশির ভাগ ছাত্র ও তাদের পরিবার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

Advertisement

শিক্ষক-সমাজবিদদের একাংশের মতে, এ ক্ষেত্রে আর্থসামাজিক অবস্থা বড় ভূমিকা নিচ্ছে। এই অঞ্চলের বহু পরিবার দরিদ্র। পেট চালানোই তাদের পক্ষে কষ্টকর। ফলে ছেলে কাজ চালানোর মতো লেখাপড়া শিখলেই তাঁরা কোনও জায়গায় কাজে লাগিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন যাতে পরিবারে আরও একটা কাজ করা মানুষের সংখ্যা বাড়ে। কাজ না করিয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করানো তাঁদের কাছে বিলাসিতা। ঠিক এই কারণেই আগে অল্প বয়সে বহু মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু এখন কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রীর মতো সরকারি প্রকল্পের কল্যাণে সেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ফলে উঁচু ক্লাসে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী-সংখ্যা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট ছাত্র ও ছাত্রী সংখ্যায়।

যেমন, করিমপুর ১ ব্লকের পিপুলবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ৩৯ ও ছাত্রী ৩৫ জন। নবম শ্রেণিতে ছাত্র ৬৩ ও ছাত্রী ৫৫জন। অথচ দশম শ্রেণিতে ওঠার পরেই ছাত্র কমে হয়েছে ৫৯ আর ছাত্রী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮। একাদশে ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত যথাক্রমে ২৫ ও ৩৪ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২৭ ও ৩৪ জন। বালিয়াডাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রছাত্রী সমান-সমান। ৮২ জন করে। তবে গত বছরে ৯০ জন ছাত্রী ও ৭৬ জন ছাত্র পরীক্ষায় বসেছিল।

Advertisement

পিপুলবেড়িয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম তিওয়ারি জানান, আগে অষ্টম, নবম বা দশম শ্রেণিতে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত। এখন মেয়েদের স্কুল ছুটের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু ছাত্রদের একটা বড় অংশ স্কুল শেষ হওয়ার আগেই কাজে যোগ দিচ্ছে। একই কথা জানান বালিয়াডাঙা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক অসিতকুমার পাল। তিনি জানান, তাঁর স্কুলে একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণির বহু ছাত্র সারা বছর দক্ষিণ ভারতে কাজ করে। বার্ষিক পরীক্ষা, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের আগে গ্রামে ফিরে পরীক্ষায় বসে। তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে স্কুলও বাধা দিতে পারে না। আবার অনেক ছাত্র কাজে যোগ দিয়ে পড়াশোনায় ইতি টানে।

অন্য দিকে, এখন নাবালিকা বিয়ে আটকাতে প্রশাসন খুবই কড়া। সেই সঙ্গে কন্যাশ্রী প্রকল্পে মেয়েরা টাকা পায়। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা মেলে। তাই বেশির ভাগ পরিবার মেয়েদের অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পাশ করাতে চায়। করিমপুর ১ বিডিও অনুপম চক্রবর্তী জানান, মেয়েদের জন্য এই সব প্রকল্পে বাল্য বিবাহ যেমন রদ করা গিয়েছে তেমনই মেয়েদের পড়ানোর আগ্রহ বেড়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement