চার চাকার নবাবিয়ানায় ভাটার টান

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৩৬
Share:

ফাইল চিত্র।

ছায়াটা যে দেশ জুড়ে ছড়িয়েছে, সান্ত্রী-মন্ত্রীর যে যুক্তিই থাক না কেন তা যে বাস্তব, প্রান্তিক জেলার আনাচকানাচে তা স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর যুক্তি ছিল— নিজের গাড়ির ঝক্কির চেয়ে নয়া প্রজন্ম এখন ক্যাব না হয় মেট্রোর দিকে ঝুঁকেছে। গাড়ি শিল্পে মন্দার সেটাই বড় কারণ। মুর্শিদাবাদ জেলায় ক্যাবের উঁকিঝুঁকি নেই। মেট্রোর পিলার পড়েনি। তবে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর এবং মাঝারি মাপের মফস্‌সলগুলিতে ছড়িয়ে থাকা ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, মন্দা জেলাতেও।

Advertisement

গত বছর এপ্রিল থেকে অগস্ট, চার মাসে যে সংখ্যক গাড়ি বিক্রি হয়েছে, তার তুলনায় চলতি আর্থিক বছরের চার মাসে বিক্রিবাটা কিঞ্চিৎ কমেছে। তবে তার সঙ্গে নয়া প্রজন্মের মানসিকতা বদলের যে কোনও সম্পর্ক নেই ডিলার এবং সরকার দু’তরফেই তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

মুর্শিদাবাদ এমনিতেই পিছিয়ে থাকা জেলা। চার চাকার গাড়ির মতো দামি পণ্য পড়শি আর পাঁচটা জেলার মতো যে বিক্রি হয় না তা বলাই বাহুল্য। সংখ্যালঘু প্রধান এই জেলায় গাড়ি বিক্রির মরসুমও আর পাঁচটা জেলার সঙ্গে মেলে না। দুই ইদ কিংবা ফলন ভাল হলে হাতে কিছু টাকা এলে গাড়ির বিক্রি বাড়ে। বিভিন্ন ডিলারের সঙ্গে কথা বলে এমনই পরিসংখ্যান মিলেছে। ফলে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া নয়া প্রজন্মের মানসিকতার দায় এই জেলায় অন্তত নেই!

Advertisement

পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভাল পাট কিংবা কান্দি এলাকায় ধান-গমের ফলন ভাল হলে ট্রাক্টর, দ্বিচক্রযানের বিক্রি বাড়ে। গাড়ির বিক্রি মূলত বহরমপুর, ফরাক্কা, কান্দির মতো শহরেই সীমাবদ্ধ।’’ প্রায় একই সুরে এক ডিলারের দাবি, ‘‘জেলায় গাড়ি বিক্রির মরসুম ইদ-কোরবানি। এই সময় কাঁচা টাকা নিয়ে প্রবাসে কর্মরত জেলার মানুষ ঘরে ফেরেন। হুজুগে কেনাকাটাও করেন। অনেকেই মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মসূত্রে থাকেন। ঘরে ফেরার তাঁদেরও এটাই সময়।’’

তবে মন্দার ছায়ায় এ বার সেই সব মরসুমেও কিঞ্চিৎ আঁধার! বহরমপুরের এক মোটরবাইক শোরুমের মালিক হিমাদ্রী দাস বলছেন, ‘‘দু’চাকার গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ১২-১৫ শতাংশ কমেছে। বৃষ্টির অভাবে পাটের উৎপাদন কম। ফলে মানুষের হাতে টাকার জোগান নেই। এ সব কারণে গাড়ি বিক্রি কমেছে।’’

বহরমপুরের মারুতি সুজুকি’র শো-রুমের সেলস ম্যানেজার রানা সরকার বলছেন, ‘‘২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে যেখানে ৬৪ শতাংশ গাড়ি বিক্রি হয়েছিল, সেখানে ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ গাড়ি বিক্রি হয়েছে। তবে বছর এখনও ফুরোয়নি। মরসুমেরও কিছু বাকি আছে। মন্দা খানিক কমতেও পারে।’’ মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নোটবন্দির পর থেকে আর্থিক মন্দা শুরু হয়েছে। যার প্রভাব এসে পড়েছে গাড়ি বিক্রির উপরেও। স্বাভাবিক ভাবে এখানেও গাড়ি বিক্রি কমেছে।’’

মুর্শিদাবাদের বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলছেন, ‘‘ব্যাঙ্কগুলি থেকে মূলত গাড়ির জন্য ঋণ দেওয়া হয়। গত কয়েক মাস থেকে দেখা যাচ্ছে, সে ঋণ নেওয়ার আগ্রহ কমেছে। তবে গাড়ি বিক্রিতে ওঠাপড়া তো থাকেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement