অধীর চৌধুরীর ধসে যাওয়া গড়ে শেষ মাস্তুল ডোমকল।
সেই ডোমকল দখল এখন পাখির চোখ তৃণমূলের। সেই লক্ষ্যেই পথে নামলেন জেলায় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শুভেন্দু অধিকারী। আর ঠিক তখনই জোটের কর্মীদের নিয়ে রণকৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর।
কিছু দিন আগেও ডোমকল বলতে বোঝাত সিপিএম আর কংগ্রেস। কিন্তু গত বছরখানেকে সেটা কিছুটা পাল্টে দিতে পেরেছে তৃণমূল। একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, দলবদলের খেলায় এখন সব তৃণমূলের দখলে।
শনিবার বৃষ্টিতে জনসভা ভেস্তে যাওয়ার পরে শুভেন্দু যখন হাঁটতে শুরু করলেন, তাঁর সঙ্গে অন্তত হাজার দেড়েক কর্মী-সমর্থক। যদিও বিরোধীদের দাবি, লোভ আর ভয় দেখিয়ে জনপ্রতিনিধিদের তৃণমূলে ভেড়ানো হয়েছে, কিন্তু আমজনতা তাদের সঙ্গেই আছে।
গত বিধানসভা নিবার্চনের আগেও ডোমকলে তৃণমূল বলতে ছিল হাতে গোনা। ওই ভোটে জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেনের ছেলে সৌমিক প্রার্থী হতেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক বহরমপুর থেকে এসে ডোমকলে বাড়ি করে পাকাপাকি থাকতে শুরু করেন। তাতে ফলও হয়। ফাটল ধরে বাম আর কংগ্রেসের দুর্গে। তবে ভোটের দিন সকালে বাম কর্মী খুন হওয়ার পরে কংগ্রেসের ভোটের একটা বড় অংশ সিপিএমের বাক্সে পড়ে। হেরে যান সৌমিক।
পথে প্রচারে শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
তার পরেও হাল ছাড়েনি তৃণমূল। ডোমকল পুরসভা দখলের জন্য প্রায় বছরখানেক ধরেই জমি তৈরি করেছে তারা। সেই সৌমিককেই সামনে রেখে পুরভোটে লড়তে নেমেছে তৃণমূল। তার ফলে বিধানসভায় যেখানে জোট হয়নি, সেই ডোমকলে পুরভোটে এক ঘাটে জল খেতে হচ্ছে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে। একই মঞ্চে বসতে দেখা যাচ্ছে অধীর ও আনিসুর রহমানকে।
ডোমকলের একটি সিনেমা হলে জোটের কর্মিসভায় এ দিন অধীর ছাড়াও ছিলেন আনিসুর ও এলাকার সাংসদ বদরুদ্দোজা খান। বৈশাখের গরমকে হার মানিয়ে হলে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। বাইরেও কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। আর তা দেখেই অধীরের হুমকি— ‘‘শুনছি, তৃণমূল বাইরে থেকে গুন্ডা আনছে। পুলিশ যদি ব্যবস্থা নেয় তো ভাল, তা না হলে মানুষের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করব আমরাই।’’ বহরমপুর পুরসভা তাঁর হাতছাড়া হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে অধীরের দাবি, ‘‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে শহরটার চেহারা বদল হয়ে গিয়েছিল। জনপ্রতিনিধিদের ভয় দেখিয়ে শাসক দলে ভেড়ানো হয়েছে।’’ অধীরের চ্যালেঞ্জ, ‘‘সাহস থাকলে এখনই ওখানে ভোট করার সরকার, তা হলে বুঝে যাবে, কত ধানে কত চাল।’’
কোনটা ফাঁকা বুলি আর কোনটা কৌশলী চাল, তা বিচার করবে সময়।