মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
প্রায় এক বছর পার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা ভাগের মুখের কথা মুখেই রয়ে গিয়েছে। বরং নদিয়া, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ তিন জেলার প্রশাসনিক বৈঠকেই জেলা বিভাজনের প্রস্তাবে কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীই।
কংগ্রেস ও সিপিএমের মতে, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই ২০২২ সালের ১ অগস্ট নবান্নে জেলা ভাগের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি সাংবাদিক বৈঠকেই রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ৬ মাসের মধ্যে জেলা ভাগ কার্যকরী করতে নির্দেশও দেন। তার পরে এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান বলছেন, ‘‘২১ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেখানেই তুলব জেলা বিভাজনের দাবি।’’
জেলা বিভাজনের ঘোষণায় তৃণমূলের নেতারা খুশি হলেও বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তবে খুশি ছিলেন সাধারণ মানুষজন। বহু জায়গায় আনন্দ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। জঙ্গিপুর পুরসভায় শুরু যায় মিষ্টি মুখ। দলের এক বিধায়ক জেলা ভাগের এই ঘোষণাকে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন সে দিন।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক কাশীনাথ ভকত জানান, জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের এখানে কিছু করার নেই। ২০১১ সালে জনগণনা মতো দেশে মোট জেলা ৬৪০টি।
এই মুহূর্তে দেশে জেলার সংখ্যা ৭৭৫টি। কাশীনাথ বলেন, ‘‘জেলার সংখ্যা কত করা হবে তার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। সবটাই নির্ভর করে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের উপরে। তবে ছোট জেলা হলে উন্নয়ন ও প্রশাসনের গতি বাড়ে।’’
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে জেলা ভাগ সবচেয়ে জরুরি জঙ্গিপুরের জন্য। ফরাক্কার বাহাদুরপুর থেকে জেলা সদর বহরমপুরের দূরত্ব দেড়শো কিলোমিটার, সারা দেশের কোথাও তা নেই। কিন্তু করা হল না। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সরকারের যাবতীয় চুরি, জোচ্চুরি ঢাকতে নতুন জেলার কথা ঘোষণা করেছিলেন।”
জেলার প্রাক্তন সভাধিপতি ও কংগ্রেস নেতা শিলাদিত্য হালদার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা এক বছর হল। এখন বলছেন, টাকা নেই, অফিসার নেই। পরিকাঠামো নেই যখন তখন ঘোষণা করা কেন? চমক দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোট টানা? লোকসভা ভোটের আগে আবার হুজুগ তুলবে তৃণমূল জেলা ভাগের।”
বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদের সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ বলছেন, ‘‘জঙ্গিপুর থেকে কোনও বিধায়ক নেই আমাদের। শাসক দলের যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা দিদি চটে যাবেন বলে জেলা নিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছেন।’’
জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান অবশ্য নতুন জেলার আশা ছাড়ছেন না। বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে জেলা ভাগের কথা তুলব। এই মুহূর্তে জঙ্গিপুরকে অন্তত আলাদা জেলা করা খুবই দরকার।”