শিক্ষক ও পড়ুয়াদের অনুপাত বিচার করে বদলির নির্দেশ। প্রতীকী চিত্র।
কোথাও ছাত্রসংখ্যার তুলনায় শিক্ষক বেশি। কোথাও বা উল্টোটা। সেখানে প্রচুর পড়ুয়া, কিন্তু শিক্ষক নেই। যেমন, রানাঘাট ইউসুফ ইনস্টিটিউশনের ছাত্র সংখ্যা ৭৮ জন। অথচ, স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের সংখ্যা চার জন। গড়ে ২০ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে শিক্ষক। কিংবা কৃষ্ণনগর রামবক্স চেৎলাঙ্গিয়া হাইস্কুলের ৯৭ জন পড়ুয়ার জন্য ইংরেজি শিক্ষক রয়েছেন তিন জন। অর্থাৎ, ৩২ জন ছাত্র পিছু এক জন শিক্ষক। অথচ, কৃষ্ণগঞ্জের খাঁটুরা শ্রীশ্রী মা হাইস্কুল কিংবা কল্যাণীর চরসরাটি কেন্দ্রীয় হাইস্কুলের ২৩৮ জন পড়ুয়ার জন্য মাত্র দু’জন করে ইংরেজি শিক্ষক। দুটি স্কুলেই ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১১৯ জন পড়ুয়া পিছু মাত্র এক জন শিক্ষক।
নদিয়ার সরকার পোষিত বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়া ও শিক্ষকের অনুপাতের এই ছবি ধরা পড়েছে। অনুপাতের ভারসাম্য আনতে তৎপর হচ্ছে শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই জেলা শিক্ষা দফতরের তরফে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে নদিয়ার প্রায় পঞ্চাশটি স্কুলের ইংরেজি, ভৌতবিজ্ঞান, ভূগোল-সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাতের ভারসাম্যের অভাব দেখা যাচ্ছে। শিক্ষক মহলের কথায়, সম্প্রতি রাজ্যের প্রাথমিক ও উচ্চ-প্রাথমিক মিলিয়ে ৮২০৭টি স্কুলের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ছাত্রসংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির এমন কোনও তালিকা সরকারি স্তরে প্রকাশিত না হলেও ছাত্রসংখ্যা দ্রুত হারে কমছে, এমন স্কুলের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিভিন্ন বিষয়ে পড়ুয়া-শিক্ষক ভারসাম্যের অভাব ভীষণ ভাবে প্রকট হয়ে উঠছে।
শিক্ষামহল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দূর-দুরান্তে নিয়োগের ফলে অনেক শিক্ষক নানা সমস্যায় পড়েছিলেন। তাঁদের কাছাকাছি নিয়োগের সুযোগ করে দিতে ২০১২ সালে প্রথমে আপস বদলি (মিউচুয়াল ট্রান্সফার) চালু হয়। পরবর্তী সময়ে সাধারণ বদলি চালু হয়। এই দু’ধরনের বদলির সুবিধা দিতে গিয়ে বহু স্কুলে বিশেষ করে গ্রামীণ স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ছাত্র-শিক্ষকের ভারসাম্য তৈরির বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে। আদালতের এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে শিক্ষা দফতর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পুনর্বিন্যাস বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে— প্রথমত, যাঁরা অপেক্ষাকৃত নতুন শিক্ষক, তাঁদের নামই এ ক্ষেত্রে প্রথমে থাকবে। দ্বিতীয়ত, যে সব শিক্ষিকার ছোট সন্তান আছে বা যাঁরা আগামী দু’বছরের মধ্যে অবসর নেবেন, তাঁদের নাম শেষে বিবেচিত হবে।
নদিয়া জেলার এমন স্কুলগুলির ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বোঝার জন্য শিক্ষকদের যোগদান, বদলি ইত্যাদি সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে জেলা বিদ্যালয় দফতর। এই প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দিবেন্দ্যু পাল বলেন, “এটা আদালতের নির্দেশে হচ্ছে। যে সব স্কুলে প্রচুর ছাত্র কিন্তু শিক্ষক কম, সেখানে পাঠানো হবে কম ছাত্র সংখ্যার স্কুলের অতিরিক্ত শিক্ষকদের। এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক যে ব্লক, যে মহকুমা যে জেলায় আছেন, বদলি তার মধ্যেই হবে।”
বিভিন্ন বিদ্যালয় প্রধানেরা জানাচ্ছেন, শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত এই তৎপরতায় পরবর্তীতে কোন স্কুলে তাঁদের ঠাই হবে, এই আশঙ্কায় দিন কাটছে অপেক্ষাকৃত নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কেননা, বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বর্তমানে কর্মরত জেলার অন্য কোনও স্কুলে বদলি করা হবে। কিন্তু যদি সেই জেলার কোনও স্কুলে ওই বিষয়ে শূন্যপদ না থাকে, তা হলে অন্য জেলায় তাঁকে বদলি করা হবে।