—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
শিক্ষার অধিকার আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাথমিকে ভর্তির সময় পড়ুয়াদের কাছ থেকে মোটা টাকা নিচ্ছে অনেক স্কুল। যা নিয়ে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা মহলেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কারণ, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী মাধ্যমিকস্তরে ভর্তির জন্য পড়ুয়া পিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নেওয়া গেলেও প্রাথমিক স্তরে কোনওভাবেই টাকা নেওয়া যায় না। তারপরেও স্কুলগুলি কী ভাবে ভর্তির সময় পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে বা কী ভাবে কোনও রসিদ না দিয়েই টাকা নেওয়া হচ্ছে তার সদুত্তর দিতে পারেননি জেলার শিক্ষা দফতরের কর্তারা। যদিও সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, সরকার প্রয়োজনের তুলনায় কম্পোজিট ফান্ড কম দেওয়ায় এই টাকা নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
বিনা ব্যায়ে বাধ্যতামূলক শিশু শিক্ষার অধিকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী ৬ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত সমস্ত শিশুদের বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এই আইনে শিশুদের শিক্ষার মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এই আইন বলবৎ হয়েছে। শিক্ষক মহলের দাবি, এই আইনে প্রাথমিকে কোনও পড়ুয়ার কাছ থেকে ভর্তি বা অন্য কোনও কারণে অর্থ নেওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে ছবিটা তার উল্টো। অনেক প্রাথমিক স্কুলই ভর্তির সময় পড়ুয়াদের কাছ থেকে মোটা টাকা নেওয়া হচ্ছে। এমনকী টাকা নেওয়ার কোনও রসিদও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে কোন বছর কত টাকা তোলা হল আর কত টাকা খরচ হল তার হিসাব থাকছে না স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে।
কৃষ্ণনগরের লেডি কারমাইকেল গার্লস স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে ভর্তির জন্য চারশো টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে ভর্তি হতে আসা অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকরা সমস্যায় পড়ছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের অনেক ছাত্রী। বছরে বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র ছাপানো, সাফাই কর্মীর বেতন, নিরাপত্তারক্ষীর বেতনের টাকা কোথা থেকে আসবে? সরকার যে টাকা দেয় তাতে হয় না।” একই দাবি করছেন কৃষ্ণনগর হাই স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার সাহা। তিনি বলেন, “প্রশ্নপত্র ছাপা থেকে ইলেকট্রিক বিল, সাফাইকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীর বেতন ছাড়াও আরও অনেক খরচ আছে। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় দু’লক্ষ টাকা খরচ হয়। অথচ কম্পোজি়ট গ্রান্ট মেলে মাত্র ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। পড়ুয়াদের কাছ থেকে তাই ২৪০ টাকা করে নিতে হয়।” যদিও কেন রসিদ দেওয়া হয় না তার কোনও সদুত্তর তাঁদের কাছে মেলেনি। জেলার প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক সুকুমার পাসারি বলেন, “প্রাথমিকে ভর্তির সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই টাকা নিতে পারেন না। এটা আইন বিরুদ্ধ। যদিও আমরা এখনও পর্যন্ত তোমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”