চলছে ‘ফিস্টি’: মঙ্গলবার রাতে ডোমকলে। নিজস্ব চিত্র
নির্বাচনে কংগ্রেসের সাফল্য মানেই ‘একটা ফিস্টি হয়ে যাক!’ রীতিটা ফিকে হতে হতে এক সময় শীতের কুয়াশার মতো হারিয়ে গিয়েছিল। দশক ঘুরে, রাজস্থান-ছত্তীশগঢ়-মধ্যপ্রদেশের হাত ধরে সেই ফিস্টির দিন বুঝি ফিরে এল মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস-সংস্কৃতিতে।
তবে, ‘‘এ বার সত্যিই সময় মতো সংস্কৃতিটা ফিরল!’’ ফুট কাটছেন জেলার প্রবীণ এক কংগ্রেস নেতা। মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভরা বাম আমলেও ভোট জেতার ‘ফিস্টি’র সময়টা এসে হাজির হত দম চাপা গ্রীষ্মে। মে-জুন কিংবা আরও খানিক পরে প্রথম বর্ষার জুলাই মাসে। এ বার, মধ্য এবং পশ্চিম ভারতে কংগ্রেসের সাফল্যটা এল একেবারে মাঝ-শীতে।
রাজ্য জয়ের ইশারা অনেক দিনই ফিকে হয়ে গিয়েছে, কিন্তু জেলা জয়ের ধারাটা পালাবদলেরও আগেও ধরে রেখেছিল যে দল এ বার, ওই তিন রাজ্য জয়ের পরে দেশ শাসনের ইশারায় যেন ফুটছেন কংগ্রেস সমর্থকেরা। কর্মীরা তাই কোমড় বাঁধতে শুরু করেছেন জেলার আনাচ কানাচে। কোথাও পাঁচ মাথা এক হয়ে খোঁজ করছেন একটা দিশি মোরগের, কোথাও বা একটা ছোট মাপের ছাগল, কংগ্রেসের পুরনো সমর্থক, দশ বাড়ির এক সঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়ার প্রাথমিক শর্ত!
আরও পড়ুন: ‘এ বার হয়তো ন্যায় বিচার হবে’, বিজেপির হারে আশায় আফরাজুলের স্ত্রী
বাম আমলে, বিরোধী আসনে বসলেও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের জয়ের খামতি ছিল না। ছবিটা বদলে যেতে শুরু করেছিল তৃণমূল দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পরে। কংগ্রেসের দখলে থাকা পুর-পঞ্চায়েতগুলির তাবড় নেতারা পিল পিল করে নাম লেখাতে শুরু করেছিলেন তৃণমূলে। ডিগবাজির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল কংগ্রেসের বিধায়কদের। অবস্থা এক সময়ে এমন দাঁড়ায় যে খোদ দলনেত্রীকে ঘোষণা করতে হয়েছিল, দল ভাঙানোর খেলা আর নয়। তবে, তাতে অবশ্য তেমন সাড়া মেলেনি। কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের দলবদল চলছিলই। সেই ভাঙা হাটে ‘মনমরা’ কংগ্রেসের সংস্কৃতি থেকে ‘ফিস্টি’ কালচার’টাই ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছিল।
মোরগ-ছাগলের মাংস কিংবা ঘন দুধের পায়েসের গন্ধ মনে করিয়ে দিচ্ছে কংগ্রেসের সাফল্য হারানো সেই সংস্কৃতি ফিরিয়ে এনেছে জেলায়।
মঙ্গলবার, ফল বের হওয়ার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছিল লাড্ডু বিতরণ। জেলার প্রসিদ্ধ ছানাবড়া প্রায় বাড়ন্ত হয়েছিল বহরমপুরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে। কলকাতা থেকে বেয়াই এসেছিল ইন্দ্রপ্রস্থের শ্যামাচরণ পালের বাড়িতে। তাঁদের জন্য ছানাবড়া কিনতে গিয়েই হোঁচট খেতে হয় তাঁকে— ‘না দাদা, আজ কংগ্রেস কার্যালয়ে চলে গিয়েছে সব মিষ্টি!’
গঞ্জ এলাকায় অবশ্য মিষ্টি নয়, ফিস্টির জন্য খোঁজ পড়েছে ‘তাজা মোরগের’। কোথাও ‘ডাঁটো ছাগলের’! ডোমকলের কুপিলা গ্রামে সন্ধ্যা থেকে পাড়ায় পাড়ায় হয়েছে খিচুড়ি আর পায়েস রান্না। সেখানকার কংগ্রেস কর্মী আব্দুর রশিদ বলছেন, ‘‘আমরা খুব কম বয়স থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে আছি। এক সময়ে এমন আনন্দে রান্না করে এক সঙ্গে খাওয়া রেওয়াজ ছিল। বছর কয়েক ধরে সেই ট্র্যাডিশনটাই হারিয়ে গিয়েছিল।’’
আরও পড়ুন: পাঁচ রাজ্যে ভোটের ধাক্কা সামলাতে শেষমেশ ভরসা খয়রাতি!
বাবর আলি বলছেন, ‘‘বছর কয়েক থেকে মনে হচ্ছিল আর মনে হয় আমাদের দলটা ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মানুষ আবার কংগ্রেসেই আস্থা রাখছে। ফলে আমরাও ফিস্টিতে মেতেছি।’’