—নিজস্ব চিত্র
জলের ‘রুপোলি শস্যের’ দেখা নেই! গঙ্গায় জাল ফেলে সকাল থেকে হা-পিত্যেস করে বসা থাকায় সার হচ্ছে। দেখা মিলছে না তাদের।
কিন্তু বছর দুয়েক আগেও এমনটা ছিল না। গঙ্গায় জাল ফেললেই উঠে আসত ইলিশের ঝাঁক। এলাকার এক মৎস্যজীবী বলছেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে গঙ্গা থেকে ইলিশের ঝাঁক উঠত। বাজারে সেই ইলিশ বেচে পুজোয় ছেলেমেয়ের জন্য নতুন জামা কিনেছিলাম।’’
কিন্তু কী হলো কে জানে! গত বছর থেকে সেই গঙ্গায় ইলিশের দেখা নেই। বর্ষার সময় প্রতি বছর গঙ্গার জল বাড়ার সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি বলে দেয় ইলিশের ঝাঁক আসার সময় হয়েছে। এ বছর গঙ্গায় জল নেই। নেই বৃষ্টির দেখাও। ফলে দুইয়ের কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত গঙ্গায় ইলিশ অমিল। এই সময়ে ধুলিয়ান বাজারে ইলিশের ব্যাপক আমদানি হত। এমনকি ইলিশের টানে আত্মীয়-পরিজন যেমন বেড়াতে আসতেন, তেমনি অনেকেই আত্মীয়-কুটুম্বুদের বাড়িতে ইলিশ পাঠাতেন।
বাজারে ইলিশের দামও এই সময়ে অনেক কমে যেত। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত গঙ্গায় ইলিশের দেখা না পেয়ে মৎস্যজীবীরা নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখে অন্য কাজের সন্ধান করছেন।
ধুলিয়ানের কাঞ্চনতলা, নতুন বাজার ও লালপুরে মৎস্যজীবীদের বাস। পারিবারিক সূত্রে তাঁদের মাছ ধরা জীবিকা। বর্তমান প্রজন্ম অবশ্য় মাছ ধরা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কারণ গঙ্গায় ইলিশের অভাব।
কিন্তু ইলিশের দেখা মিলছে না কেন? কাঞ্চনতলার মৎস্যজীবী বাবুলাল মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমি বাবার হাত ধরে চোদ্দো বছর বয়স থেকে মাছ ধরার কাজের সঙ্গে জড়িত। তখন ইলিশ ধরে ধুলিয়ানের বাজারে বেচতাম। সেই সব দিন আর নেই গঙ্গা থেকে মাছ সব হারিয়ে গিয়েছে।’’
তবে ফরাক্কা ব্যারাজ তার কারণ হলেও বাংলাদেশে সরু ফাঁসের জাল দিয়ে ছোট থেকে বড় সব ইলিশ ধরে নেওয়ায় জন্য ফরাক্কার দিকে মাছ আসছে না বলেও অভিযোগ মৎস্যজীবীদের।
গঙ্গা দূষনের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে বলে মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক জানান।
মৎস্যজীবী লালপুরের কমল মণ্ডল বলেন, ‘‘গঙ্গায় জল এবার নেই। ইলিশ আসবে কী করে? তার উপর বৃষ্টি ও নেই, তাই মাছ না থাকায় নৌকা ঘাটে বেঁধে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে জোগাড়ের কাজে যাচ্ছি। আশা ছিল গঙ্গায় এবার ইলিশ আসবে কিন্তু গঙ্গায় জল নেই। ইলিশ ও নেই।’’
শ্রাবণ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু এখনও মধ্যবিত্তের পাতে পড়েনি গঙ্গার টাটকা ইলিশ!