খরা কি গ্রাস করবে এই সব আবাদি জমি? নিজস্ব চিত্র
বানভাসি নদিয়া কিনা শেষে খরাপ্রবণ বলে তকমা পেল? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের হ্যাজার্ড অ্যাটলাস বা বিপর্যয় মানচিত্রে রাজ্যের আবহাওয়া বদলের যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে তাতে প্রশ্নটা অনেকের মনেই পাক খাচ্ছে। পরের পর নিম্নচাপ, লাগাতার বৃষ্টি, কথায় কথায় বন্যায় নাজেহাল নদিয়া কী করে খরাপ্রবণ হতে পারে তা মাথায় ঢুকেছে না অনেকেরই। গঙ্গার কোল ঘেঁষে নদিয়া কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের মতে এরাজ্যে খরার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় বিপদগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে নদিয়া এবং বীরভূম।
যদিও এ নিয়ে বিস্মিত নয় বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রাজ্যের কৃষি আবহাওয়াবিদ মৃণাল বিশ্বাস বলেন, “ওই মানচিত্রে আবহাওয়ার চরিত্রবদলের যে প্রবণতার কথা বলা হয়েছে সেটি ষাট বছরের বেশি সময় ধরে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়েছে। আর খরার ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সূচকের মাধ্যমে ১০০ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে যা পেয়েছেন তাঁর ভিত্তিতে নদিয়াকে খরাপ্রবণ বলেছেন।” তাঁর কথায় “আমরা আবহাওয়ার একেবারে সাম্প্রতিক কালের চরিত্র দেখে বিষয়টি মেলাতে গেলে ভুল হবে। গত তিন-চার বছর ধরে প্রচুর ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপ এবং তার প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি দেখে হিসাব কষলে চলবে না। বিগত কয়েক বছরের জেলার গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেখে একশো বছরের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। জলবায়ু বা আবহাওয়ার সব সিদ্ধান্তই গৃহীত দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে।”
তথ্য জানাচ্ছে ২০১৮ সালে নদিয়ায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯০০ মিলিমিটারের মতো। কিন্তু ২০১৯ সালে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ১১০০ মিলিমিটার প্রায়। ২০২০ সালে নদিয়া ১৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। যা জেলার বাৎসরিক গর বৃষ্টিপাতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছিল। লক্ষ্যণীয়, ২০১৯ থেকে জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে এবং সেই সঙ্গে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যাও। ২০১৯ সালে বুলবুল দিয়ে শুরু। তারপর একে একে আমপান, ফনী, ইয়াস। সরকারি কৃষিকর্তা পার্থ ঘোষের কথায়, “ ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি আর বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টির মধ্যে ফারাক আছে। সেই দিক থেকে দেখলে গত কয়েকবছরে যত বৃষ্টি পেয়েছে সবই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। যদি এগুলো না থাকে তা হলে তো সত্যিই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম নদিয়ায়।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোলের ছাত্র জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন “যে কোন জায়গার ৩৫ বছরের জলবায়ুর ওপর ভিত্তি করে আবহাওয়ার ধারণা গড়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে বিগত দিনে নদিয়ার বৃষ্টিপাতের তথ্যের প্রতিফলন ঘটেছে ওই রিপোর্টে। কিন্তু আমাদের চোখে লাগছে কারণ সাম্প্রতিক কালে পরপর নিম্নচাপ এবং তার জেরে প্রভূত পরিমাণ বৃষ্টি দেখে। সাম্প্রতিককালে এই যে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটছে তা যদি আগামী দিনে একই ভাবে চলতে থাকে তা হলে দশবছর পরে গিয়ে হয়তো দেখা যাবে নদিয়ার খরা প্রবণতা বদলে গিয়েছে। সেটা সময় বলবে।”