মৃত ছাত্রের শোকগ্রস্ত মা-বাবা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছিল কিশোর। সব সময় মোবাইলে গেম খেলায় বুঁদ হয়ে থাকত। সেই গেমের নেশাতেই বেঘোরে প্রাণ গেল তার।
এক তলা বাড়ির ছাদে ঘুরতে-ঘুরতে মোবাইলে গেম খেলছিল নাকাশিপাড়ার বিলকুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বান্দাখোলা গ্রামের বাসিন্দা দশম শ্রেণীর ছাত্র সাহিনুর ইসলাম সেখ (১৬)। আশপাশ সম্পর্কে কোনও হুঁশ ছিল না। ছাদে পাঁচিল নেই। কখন যে গেমের নেশায় বিভোর হয়ে সেই নেড়া ছাদের বাইরে পা রেখে ফেলেছে বুঝতেও পারেনি সে।
ছাদ থেকে বেসামাল হয়ে নীচে পড়ে যায় বিলকুমারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রটি। পরিবারের লোকজন তাকে বেথুয়াডহরি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে চিকিৎসকেরা কৃষ্ণনগরে রেফার করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
মৃত সাহিনুরের বাবা বান্দাখোলা গ্রামে মধ্যপাড়ার মুজিবর শেখ পেশায় শীতবস্ত্র ব্যবসায়ী। তার তিন ছেলের মধ্যে সাহিনুর ওরফে সাইন বড়। পরিবার সূত্রের খবর, লকডাউনের পর থেকে সাহিনুর এলাকার কিছু ছেলের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে মোবাইলে গেম খেলতো।এর জন্য অনেক বার বাবার বকুনিও খেয়েছে। এর পর সে বাবার কাছে মোবাইল কিনে দেওয়ার আবদার করতে থাকে। মুজিবর সেখের কথায়, ‘‘গেম খেলা ছেড়ে দেবে বলে কথা দেওয়ায় আমি ছেলেকে মোবাইল কিনে দিই। কিন্তু কথা রাখতে পারেনি ছেলে। প্রথমে কিছু দিন সব ঠিকই ছিল। কিন্তু তার পরই আবার সে অনলাইনে গেম খেলা শুরু করে। সর্বক্ষণ তাকে চোখে চোখে রাখা সম্ভব হয়নি বাড়ির লোকেদের পক্ষে।’’ সাহিনুরের মা জাহান্নারা বিবি বলেন, ‘‘সব সময় গেম খেলতো। অনেক বারণ করেছি। কিছুতেই কান দিত না।’’
স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, সাহিনুর মাঝারি মানের ছাত্র ছিল। সপ্তাহখানিক আগেই সে মাধ্যমিকের টেস্ট দিয়েছে। বিলকুমারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিনাকি বারুই বলেন, ‘‘অনলাইন ক্লাস করতে গিয়েই ছাত্রদের অনেকে মোবাইলের নেশায় পড়েছে।’’