—নিজস্ব চিত্র।
বহু কষ্টে তাঁরা ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছিলেন। তাঁদের মাধ্যমে কোনও ভাবে পাড়়ার বা পরিবারের কেউ যাতে অসুস্থ না হন তার জন্য নিজেরাই বাড়়ি না ঢুকে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়েছিলেন অন্যত্র। গ্রামের একপাশের জঙ্গল বা মাঠ, নিজের বাড়়ির লাগোয়া কলাবাগান বা উঠোনে চলছিল কোনওমতো নিভৃতবাস। সেই আশ্রয়টুকুও ভাসিয়ে দিল আমপানের ঝড়-বৃষ্টি।
দিন ছ’য়েক আগে মহারাষ্ট্রের থানে থেকে পলাশিপাড়ার রাধানগর গ্রামে ফিরেছেন পেশায় শ্রমিক বিশ্বরূপ মণ্ডল ও রাজু মণ্ডল। দু’জনেই ট্রাকে, খালিপেটে প্রায় ২৩০০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছেন। তার পর গ্রামের সকলের পরামর্শে ও নিজেদের বিবেচনায় পাড়ার পাশে একটি মাঠের কলাবাগানে তাবু খাটিয়ে বসবাস করছেন। স্থানীয় একটি ক্লাব তাঁদের আনাজ আর চাল-ডাল দিচ্ছে এবং তাঁরা সেখানেই রান্না করে খাচ্ছেন। এ গিনের ঝড়বৃষ্টিতে সেই তাঁবু উড়ে তাঁরা খোলা আকাশের নীচে এসে দাঁড়িয়েছেন। পাছে করোনা হয়ে যায় সেই ভয়ে কেউ তাঁদের আশ্রয় দিতে চাইছেন না। নিজের বাড়িতেও পরিজনদের কথা ভেবে তাঁরা ঢুকতে পারছেন না।
এঁদেরই এক জন রাজু মণ্ডলের কথায়, “বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়াও স্ত্রী, মেয়ে আর দেড় বছরের একটি বাচ্চা রয়েছে। সকলের সুরক্ষার কথা ভেবেই চোদ্দো দিন কলাবাগানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু এখানেও আমাদের সামান্য স্বস্তি নেই। ঝড়ে েইটুকু আশ্রয় গেল। ঈশ্বর আর কত পরীক্ষা নেবেন জানি না।” দিন তিনেক আগে গুজরাত থেকে ফিরেছেন তেহট্টের বাসিন্দা বুদ্ধদেব বিশ্বাস। তিনি এখন বাড়ি-লাগোয়া একটি ভাঙা চালাঘরে গৃহবাসে আছেন। তিনি বলেন, “পরিবারের কথা ভেবে ক’দিন এই ঘরে থাকছি। কিন্তু যা ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে যে কোনও সময় এই ঘর ভেঙে পড়বে। প্রশাসন কিছু একটা করলে বাঁচি।’’ গাংনাপুর থানার মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েতের হুমনিয়া মধ্য এলাকায় পাঁচ জন পরিযায়ী শ্রমিক দিল্লি থেকে ফিরে ফাঁকা জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে ছিলেন। পরে তাঁদের স্থানীয় একটি ফ্লাড সেল্টারে রাখা হয়েছে।