বাজারে, ব্যাঙ্কে, ডাকঘরে, রাস্তায়, দোকানে সর্বত্র িভড়। লকাডাউনের আগে কাজ সারতে ব্যস্ততা। বৃহস্পতিবার। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
এমনিতেই পাত্রবাজারে ঢোকার রাস্তাটা সরু। তার উপরে রাস্তার দু’দিকের দোকান এগিয়ে এসেছে অনেকটা। একটু লোক বাড়লেই চলাফেরার সমস্যা। বৃহস্পতিবার তা চরমে উঠল মানুষের ভিড়ে। জেলায় জেলার আটটি পুরসভা ও বিভিন্ন পঞ্চায়েতে শনিবার থেকে শুরু হতে চলা টানা সাত দিনের লকডাউনে জরুরি সামগ্রী ছাড়া অন্য দোকান বন্ধ থাকবে। ফলে এক সপ্তাহের রসদ ঘরে মজুত রাখতে এ দিন বাজারে এসেছিলেন বহু মানুষ। কৃষ্ণনগরের প্রতিটি বাজারেই ছিল একই চিত্র।
মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন মাছের বাজারে, মাংসের দোকানে। ভিড় করেছেন আনাজ ও মুদির দোকানে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল মুদির দোকানে ও মাংস- ডিম কিনতে। সয়াবিনও ভাল বিক্রি হয়েছে। ‘নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার ওফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ’-এর যুগ্ম সম্পাদক গোকুল সাহার কথায়, “অন্য দিনের তুলনায় এ দিন প্রায় সর্বত্রই ভিড় বেশি ছিল। আজ শুক্রবার ভিড় আরও বাড়তে পারে।”
শুক্রবার মাঝরাত থেকে জেলায় টানা সাত দিন ধরে লকডাউন চলবে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কল্যাণী ও হরিণঘাটার বিভিন্ন জায়গায় দোকানে ভিড় উপচে পড়েছে। সপ্তপর্ণী বাজারের পাশের একটি মুদির দোকানে সকাল ১০টা নাগাদ অন্তত ২০ জন লাইন দিয়েছিলেন মাল কেনার জন্য। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সবচেয়ে বেশি চাহিদা ডিমের। অনেকেই আবার এ দিন সকালে ছুটেছেন মদের দোকানে। কাউন্টার থেকে বেশ কয়েক বোতল বিলিতি মদের বোতল নেওয়ার পর এক জন মন্তব্য করলেন, ‘‘ গত লকডাউনে তিন গুণ বেশি টাকায় মদ কিনতে হয়েছিল। এ বার যাতে তা না-হয় সেই কারণে আগে থেকে বেশি করে মদ কিনে নিলাম।’’
বাজারে তুমুল ভিড় ছিল শান্তিপুরেও। একাধিক আনাজ ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, অন্য দিনের তুলনায় অনেক আগেই শেষ হয়ে যায় যাবতীয় জিনিস। বড়বাজার এলাকার এক ডিম ব্যবসায়ী জয়দেব ইন্দ্র বলেন, ‘‘ এ দিন অন্য দিনের থেকেপ্রায় তিন গুণ বিক্রি হয়েছে।’’ আবার পেশায় দিনমজুর খোকন দাসের কথায়, ‘‘ আমরা দিন আনি দিন খাই। একসঙ্গে বেশি বাজার করতে পারানি। দুই –এক দিনের কিনে রেখেছি।’’
পলাশিবাজারও ছিল ভিড়ে ঠাসা। যদিও মাঝেমাঝে বৃষ্টির কারণে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এ দিন এটিএমের লাইনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও সামাজিক দূরত্ব চোখে পড়েনি। দেবগ্রাম ও বেথুয়াডহরি বাজারে ভিড় ছিল। তেহট্ট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার হিড়িক পড়ে যায়। ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের সামনেও লম্বা লাইন ছিল এ দিন।
রানাঘাট, কুপার্স, চাকদহ শহরের অনেকেই ডিম, সোয়াবিন এবং ডাল কিনে রেখেছেন এক সপ্তাহের জন্য। এমনিত সকাল থেকে এখানে বাজারে ভিড় ছিল। তার মধ্যে শুরু হয় বৃষ্টি। জ্যামে-জলে নরকের চেহারা নেয় বাজার এলাকা। কুপার্স বাজার ব্যবসায়ী মঙ্গল সমিতির সভাপতি তথা কুপার্স নোটিফায়েডের কাউন্সিলার পিন্টু দত্ত বলেন, “আজও ভিড় হবে বলে আশা করছি।” চাকদহ সেন্ট্রাল ব্যাবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবল দেবনাথ বলেন, “মুদিখানার দোকানে, আলুর দোকানে মানুষকে লাইন দিতেও দেখা গিয়েছে। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে অনেক রেশন দোকানের সামনেও।”