তুলে রাখা হয়েছে তাঁত। নিজস্ব চিত্র
এমনিতেই লকডাউনে কাজ না থাকায় তাঁত বন্ধ থেকেছে দীর্ঘ দিন। গত ৫ মাসে একে একে মির্জাপুরে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৪০টি তাঁত। তাঁত ছেড়ে অনেকেই চলে গেছেন ভিন্ন পেশায়। কেউ কেউ আবার তাঁতকে ঢেকেঢুকে রেখে সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন। আশা ছিল দিন ফিরবে পুজোয়। মহালয়ার পর ক্রেতাদের দেখা মিলবে। কিন্তু সঙ্কট কাটেনি মির্জাপুরের। তাঁতশিল্পীদের সাহায্যের জন্য এক সময় গ্রামে গড়ে উঠেছিল সাত সাতটি সমবায় সমিতি। এখন সবই প্রায় বন্ধ। চলছে মাত্র ২টো। ফলে তাঁত চালাতে এখন প্রধান ভরসা মহাজন। তাঁত শিল্পী তরুণ দাস বলছেন, ‘‘পুজোয় দাম পাব বলে বহু আগে থেকেই শাড়ি বুনেছি বেশ কয়েকটি। যে শাড়ি ১০০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা ক্রেতা নাই বলে মহাজন তার দাম বলছে ৬০০ টাকা। তাই বন্ধ রাখতে হয়েছে তাঁত। বিড়ি বেঁধে সংসার চলছে।’’
তাঁত ছিল, কিন্তু বিক্রি করে দিয়েছেন সম্রাট বাঘিরা, অমির বাঘিরারা। তাঁরা এখন উমরপুরে এক প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করছেন। সম্রাটের কথায়, ‘‘তাঁত চালিয়ে আর সংসার টানা যাচ্ছিল না। তাই প্লাস্টিক কারখানায় কাজে লেগেছি। মজুরিটা তো নিয়মিত পাচ্ছি। না খেয়ে থাকতে হবে না।’’ বাবা খোকন দাস ও ছেলে রিটন দাস। দু’টো তাঁত আছে বাড়িতে, কিন্তু বন্ধ। খোকন এলাকাতেই যা কাজ পান তাই করেন। রিটন প্লাস্টিক কারখানায় কাজে লেগেছেন। খোকনের কথায়, ‘‘তাঁত চালিয়ে সংসার চলে না। কলকাতা একটা ভাল বাজার মির্জাপুরের সিল্কের। কিন্তু গত ৫ মাস থেকে কলকাতার ব্যবসায়ীরা মির্জাপুরের শাড়ি নিচ্ছে না। তারা জানিয়েছে বাজার ভাল নয়। তাই বেশি শাড়ি নেব না। স্থানীয় বাজারে কত আর বিক্রি হয়?’’
বাড়িতে তাঁত থাকতেও মান্তু তালগাছি এখন হোটেলের কর্মচারীর কাজ করছেন। বলছেন, ‘‘নিরুপায় হয়েই তাঁত বন্ধ করতে হয়েছে। সংসারটা আর চালাতে পারছিলাম না।" একটি সমবায় সমিতির সভাপতি সুভাষচন্দ্র কবিরাজ বলছেন, “আগে তিন ভাই তাঁত চালাতাম। এখন দু’জন। ভরসা পাইনি বলে নিজের ছেলেকেও তাঁত থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এখন তাঁত চালিয়ে পোষাচ্ছে না। তাই এমনিতেই মির্জাপুরে তাঁত কমছে। এ বার করোনা পরিস্থিতি আমাদের আরও সঙ্কটে ফেলেছে। যাদের অন্য কোথাও যাওয়ার সংস্থান নেই তাঁত নিয়ে পড়ে আছে তাঁরাই। আর টিকে আছে জাকার্ডের মত শাড়ি বানানোর দক্ষ তাঁতশিল্পীরা। এ রকম চললে যতদিন যাবে কমতেই থাকবে তাঁতের সংখ্যা।’’ তিনি জানান, সমতিতে আমাদের আগে যা তাঁত ছিল তা কমে গেছে অনেকটাই। নেমে এসেছে পঁচিশে। সরকারি ভাবনা চিন্তা ছাড়া মির্জাপুরের তাঁত শিল্পের সঙ্কট কাটার নয়।