ধানের বদলে ধান। লঙ্কার বদলে লঙ্কা। লাভ-লোকসানের ভগ্নাংশ বাদ দিয়ে এই হল গিয়ে সোজা হিসেব।
টাকার অভাবে শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছেন না চাষি। খেতের ফসল ঘরে উঠছে না। বাজারে যাচ্ছে না সব্জিও। এ দিকে, মজুরির অভাবে সংসার অচল হয়ে পড়েছে খেতমজুরদের। শেষতক, বিনিময়।
মাজদিয়ার আদিত্যপুরের বহু চাষি এ বার ধান চাষ করেছিলেন। সোনালি শীষগুলোকে হাওয়ায় দোল খেতে দেখে মনে মনে অনেক স্বপ্ন বুনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ধান ঘরে তোলার আগেই পাকা ধানে মই দেয় নোট বাতিলের ঘোষণা। পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের ধাক্কা লাগে খেত-খামারেও।
গ্রামের সুধন্য পাল ও সত্য পাল বিঘা তিনেক জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। নোট বাতিলের পর থেকে তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন, কী ঘটতে চলেছে। চাষিদের হাতে সামান্য যা নগদ ছিল তা সমবায় ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছিলেন। এ দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সমবায় ব্যাঙ্কের লেনদেন বন্ধ করে দেওয়ায় কপাল পোড়ে তাঁদের। সুধন্য, খোকনেরা বলছেন, ‘‘নগদের জোগান নেই। মাঠে ধান পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছিল। এ দিকে দিনমজুরেরাও বেকায়দায় পড়েছিল। এমন অবস্থায় এই বিনিময়ের ব্যাপারে এগিয়ে আসেন মজুরেরাই। ধান ঘরে তুলে দেওয়ার পরিবর্তে টাকা না দিয়ে তাঁদের ধান দিয়েছি।’’
এক বিঘা ধান ঘরে তুলতে খরচ হয় হাজার চারেক টাকা। ধান বিক্রি না করে সেই টাকা পাওয়ারও কোনও সংস্থান নেই। আড়তদাররাও জানিয়ে দিয়েছেন, নগদ বাড়ন্ত। তাঁরা ধান কিনতে পারলেও এখন টাকা দিতে পারবেন না। খেতে কাজ করেই সংসার চলে আদিত্যপুরের শ্যামল সর্দার, বিকাশ সর্দারদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘ঘরে খাবার নেই। চাষিদের হাতেও টাকা নেই। তাই ধানের বিনিময়ে কাজে রাজি হয়ে গেলাম।’’
মুদির দোকানে তাঁরা ধান বিক্রি করে তেল-নুন কিনছেন। খেতে লঙ্কা আছে। ব্যাঙ্কে টাকা আছে। কিন্তু দু’টোই তুলতে পারছেন না ডোমকলের নান্টু শেখ। কারণ একটাই, নগদ টাকার অভাব। নিরুপায় হয়ে তিনিও মজুরির বিনিময়ে নগদ টাকা না দিয়ে মজুরদের লঙ্কা দিয়েছেন। শ্রমিকেরা প্রথমে অবশ্য গররাজি হয়ে জানিয়েছিলেন, ‘‘লঙ্কা নিয়ে কী করব?’’
পরে অবশ্য লঙ্কা নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা। কুপিলার এক দিনমজুরের কথায়, ‘‘কিছু লঙ্কা নিজের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছি। বরাতে এটাও ছিল!’’