Blood Bank

রক্তাল্পতায় ভুগছে সব ব্লাডব্যাঙ্কই

রক্তের সঙ্কট এখনও কাটেনি। সরকারি তথ্য বলছে অন্য বছরগুলোয় এই সময় রক্তের চাহিদা থাকে তুঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০৫:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি

লকডাউনের ফলে খুব জরুরি না হলে অস্ত্রোপচার বন্ধই ছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজসহ মহকুমা হাসপাতালগুলোতে। সাধারণত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিনে গড়ে ৭ থেকে ১০টি অস্ত্রোপচার হত। এই মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষই জানাচ্ছেন, এ ছাড়া অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো হত গড়ে ১২ থেকে ১৭টি। লকডাউনের সময় প্রসূতিদের ক্ষেত্রে এই হারের কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু অন্য অস্ত্রোপচার এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। মে থেকে আবার সেই অস্ত্রোপচার শুরু হয় এখন আনলক পর্বে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২টি থেকে তিনটিতে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষই জানাচ্ছেন, রক্তের অভাবেই অনেক অস্ত্রোপচারের দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। রক্তের জোগান এখনও স্বাভাবিক নয় বলেই চিকিৎসক
মহল জানাচ্ছেন।

Advertisement

তবে জেলার মধ্যে রক্তদানের বড় সংগঠন শমসেরগঞ্জের ন্যায় মিশনের সভাপতি মোশারোফ হোসেন বলেন, ‘‘বিভিন্ন হাসপাতালে লকডাউনের ৪ মাসে রক্তের অভাবে অপারেশন ও চিকিৎসা আটকে যাওয়া রোগীদের হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিয়েছেন আমাদের অন্তত ৭০ জন সদস্য। জঙ্গিপুর, সাগরদিঘি, বহরমপুর, এমনকি ভাগলপুর ও দুর্গাপুরে গিয়ে রক্ত দিয়েছে তাঁরা।’’

কিন্তু রক্তের সঙ্কট এখনও কাটেনি। সরকারি তথ্য বলছে অন্য বছরগুলোয় এই সময় রক্তের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। ফলে এই সময় জেলা ব্লাডব্যাঙ্কগুলোতে আরও রক্ত মজুত রাখা জরুরি বলে মনে করেন বহরমপুরের একটি স্বেচ্চাসেবী সংগঠনের সদস্য নীলেন্দু সাহা। তিনি বলেন, “লকডাউন উত্তর পরিস্থিতিতে এখনও রক্তের ঘাটতি রয়েছে জেলায়। সরকারের তরফে আরও শিবির হলে এই ঘাটতি কমবে।” জেলা ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের আধিকারিক সুমন বিশ্বাস থ্যালাসেমিয়ার বাহক। তিনি বলেন, “শুধু বহরমপুর ব্লাডব্লাঙ্ক থেকে নিয়মিত রক্ত নেন ন’শো থ্যালাসেমিয়া রোগী। জেলার সংখ্যাটা আরও বেশি। ফলে রক্তের ঘাটতি থেকে যায়।”

Advertisement

জেলা ব্লাডব্যঙ্কগুলি সূত্রে জানা যায়, প্রথম তিনটি লকডাউনের সময় রক্তের মজুত একেবারে যে শূন্যতে চলে গিয়েছিল তার তুলনায় অবস্থা কিছুটা ভাল হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ডোমকল, জঙ্গিপুর, কান্দি, লালবাগ, সাগরদিঘি সহ জেলায় মোট ছ’টি সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে। আনলক পর্বে সরকারি, বেসরকারি স্তরে কিছু রক্তদান শিবির হওয়ার ফলে রক্ত মজুতের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট ব্লাডব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষই। লকডাউনের শুরুতে জেলা প্রশাসন ভিড় এড়াতে রক্তদান শিবির বন্ধ করে দেয়। পরে স্বাস্থ্যভবন থেকে বিধিনিষেধ মেনে রক্তদান শিবিরের কথা বলা হলেও রক্তদাতাদের ভেতর করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক থাকায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা মুশকিল হচ্ছিল। ফলে রক্ত সঙ্কটে পড়েছিলেন থ্যালাসেমিয়া রোগী সহ অন্য রোগীরাও। সেই ভয় কাটিয়ে চলতি মাসে জেলায় রক্তদান শিবির আয়োজন করা হচ্ছে। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি থেকে থ্যালাসেমিয়া রোগী, জেলা ও মহকুমার প্রসুতি বিভাগ সহ জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন হয়। তবে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্লাডব্যাঙ্কগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখার জন্য রোগীদের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে যেতে হচ্ছে না বলে ব্লাডব্যাঙ্কগুলোর দাবি। নিজের মহকুমায় বসেই সেই রক্ত পাওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন বহরমপুর ব্লাড ব্যঙ্কের চিকিৎসক জয়ন্ত বিশ্বাস। তিনি বলেন “রক্তদান শিবির হওয়ার ফলে সব মিলিয়ে দিনের শেষে জেলায় রক্তের চাহিদা ও জোগানের অনুপাত প্রতি একশো জনে ৭০ জন দাঁড়িয়েছে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, “এই মুহুর্তে জেলায় কোন রক্তের ঘাটতি নেই। তবে প্রতি মাসে যদি ৫০ থেকে ৬০টি রক্তদান শিবির আয়োজন করা যায়। আর সেই শিবির থেকে যদি গড়ে ৬০ ইউনিট রক্ত পাওয়া যায় তা হলে জেলায় রক্তের ঘাটতি থাকার কথা নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement