অভিনন্দনের জোয়ার, ফোনের ইনবক্স-ভর্তি শুভেচ্ছাবার্তা, কিন্তু এরই মাঝে পিছু ছাড়ছে না একের পর এক হুমকি। কখনও সরাসরি, কখনও আবার ঘুরিয়ে।
শিবু ও টুলটুলি অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, এ সবে তাঁরা ডরান না। কিন্তু দুশ্চিন্তা একটা থেকেই যাচ্ছে, বিশেষ করে টুলটুলির মাকে নিয়ে। দুষ্কৃতীরা যে রেয়াত করছে না ওই প্রৌঢ়া মহিলাকেও।
কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালের কাছে সামান্য একটা চা-জলখাবারের দোকান। তা থেকেই যা রোজগার। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছিলেন টুলটুলি দাসের বাবা। কঠিন ছিল সেই সব দিন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে দোকানটা চালান টুলটুলির মা
কাজল দাস। দুষ্কৃতীরা লাগাতার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, তাদের পরবর্তী নিশানা ওই ছোট্ট আট বাই আট দোকানটা। ভয় দেখাচ্ছে, বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে সেটা। নিজেদের যা হবে দেখা যাবে, কিন্তু মাকে নিয়েই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে চিন্তা। তা ছাড়া, অসময়ে যাঁরা পাশে দাঁড়িয়েছেন, ভয় দেখানো হচ্ছে সেই সব আত্মীয়-পরিজনকেও। সেটাও কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না শিবু-টুলটুলি।
পুলিশ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, তাদের কাছে অভিযোগ এলে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই তা দেখা হবে। কিন্তু ওই আশ্বাসের উপর কতটুকুই বা ভরসা করা যায়। গত বৃহস্পতিবার হুমকি উপেক্ষা করে ভোট দিতে যাওয়ার ‘অপরাধে’ বাঁশ পেটা করে শিবুর দু’টো হাতই ভেঙে দিয়েছিল তৃণমূলের ভৈরববাহিনী। মহিলা বলে ছেড়ে দেওয়া হয়নি টুলটুলিকেও। এই ঘটনার পর তিন-তিনটে দিন কেটে গিয়েছে। এত দিনে সব মাত্র এক জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে কল্যাণীরই এক কলোনী থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে দাগি অপরাধী সন্তোষ রাউতকে। এলাকায় সে কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসেবেই পরিচিত। ভোটের দিন সে-ই শিবুবাবুদের উপর হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল। তার সঙ্গে ছিল বেশ কয়েক জন সাঙ্গপাঙ্গ। কল্যাণীর এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই লোকটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদেরও খোঁজ চলছে।
দাস দম্পতিকে হুমকি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমাদের দলের তরফে কেউ এই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়াবে না। পুলিশও যথাযথ পদক্ষেপ করবে বলেই আমি মনে করি।’’
যদিও স্থানীয় সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, ধৃত সন্তোষ রাউত এলাকার এক ‘বিতর্কিত’ তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ট। ওই নেতার এক ছেলের সঙ্গে তাকে প্রায়ই দেখা যায়। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায়, সন্তোষকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।
টুলটুলির কথায়, ‘‘সামান্য একটা চা-জলখাবারের দোকান। কত কষ্ট করে প্রথমে বাবা, পরে তাঁর মৃত্যুর পর মা আমাদের মানুষ করেছে। স্কুল-কলেজ পার করেছি। হাজারো কষ্টেও পিছু হটিনি। আজ আর কোনও কিছুকেই ভয় পায় না। যা হবে, দেখা যাবে।’’