CPM

CPM: দু’টি পুরসভায় গণিত বদলে দিতে পারে বাম

২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময়ে ১০টি পুরসভার মধ্যে দু’টি সিপিএম এবং চারটি করে পুরসভা কংগ্রেস ও তৃণমূলের হাতে ছিল।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

শান্তিপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই কলকাতা পুর নিগমের ভোটে আবার ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে তাদের পিছনে ফেলে দিয়েছে বামেরা। এতে প্রত্যাশিত ভাবেই চাঙ্গা হচ্ছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা, আসন্ন পুর নির্বাচনগুলিতে যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যার অর্থ বাম থেকে রামের দিকে সরে যাওয়া ভোট ফিরে আসা এবং তাতে পদ্মকুলের সাড়ে সর্বনাশ। নদিয়া জেলাতেও সেই প্রবণতা তৈরি হচ্ছে বলে বাম নেতাদের ধারণা।

Advertisement

নদিয়ার মোট ১১টি পুরসভার মধ্যে এক মাত্র কুপার্স ছাড়া বাকি সবগুলিতে ভোট হতে পারে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি। তার মধ্যে একমাত্র কৃষ্ণনগর ছাড়া বাকি ন’টি পুরসভা জেলার দক্ষিণ অংশে, যেখানে গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম তো দূরের কথা, শাসক দল তৃণমূলকে পর্যন্ত নাকাল করে ছেড়েছে বিজেপি। ফলে সিপিএম যদি বিজেপি থেকে নিজের ভোটারদের ফিরিয়ে আনতে সফল হয়, তা হলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে দক্ষিণে। সে ক্ষেত্রে বিরোধী ভোট ভাগ হলে তাঁদেরই সুবিধা হবে বলে তৃণমূল নেতারা মনে করছেন। তাঁদের অনেকেই চাইছেন, সিপিএমের শক্তিবৃদ্ধি যেন পুরভোট পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

তবে শান্তিপুর বা কলকাতায় যা হয়েছে, তা নদিয়ার বাকি পুরসভাতেও ঘটবে, এমনটা জোর গলায় বলতে পারছেন না কেউই। গোটা দক্ষিণ নদিয়াতেই বিপুল সংখ্যায় মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের বাস। একটা সময় এঁরাই ছিলেন বামেদের ভোটব্যাঙ্ক। পরে এঁদের বেসির ভাগই তৃণমূল এবং বিজেপি শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। এঁদের জোরেই বিজেপি গত দুই ভোটে তৃণমূলকে কোণঠাসা করেছে বলে প্রায় সকলেরই ধারণা। বামেদের ঘুরে দাঁড়াতে হলে এই মতুয়া ও উদ্বাস্তু ভোটারদের আস্থা ফিরে পেতে হবে। সেই সঙ্গে, তৃণমূলে চলে যাওয়া সংখ্যালঘু ভোটেও ভাগ বসাতে হবে। সিপিএম নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, সেটাই হবে এ বারের পুরভোটে।

Advertisement

কিন্তু কী ভাবে? ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ইস্তক প্রায় প্রতি ভোটে শক্তিক্ষয় হয়েছে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের। সেই সঙ্গে সংগঠনও দুর্বল হয়ে গিয়েছে। কোন কৌশলে তারা ফের জনভিত্তি ফিরে পাবে, সিপিএমের আসন্ন জেলা সম্মেলনে তা চর্চার বিষয় হতে পারে। তবে দলের তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মতে, শান্তিপুর ব্যতিক্রম নয়, বরং আগামী দিনে তা জেলার রাজনীতিতে একটি অভিমুখ হয়ে থাকবে। করোনা কালে রেড ভলান্টিয়ারদের নিজের জীবন বাজি রেখে আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানো বহু মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে দলের তরুণদের মরিয়া মনোভাবও। ক্ষমতা হারানোর পরে যে সিপিএম ঘরে ঢুকে গিয়েছিল, ইদানীং নানা কর্মসূচি নিয়ে তাদের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে।

২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময়ে ১০টি পুরসভার মধ্যে দু’টি সিপিএম এবং চারটি করে পুরসভা কংগ্রেস ও তৃণমূলের হাতে ছিল। ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে সিপিএমকে কেবল তাহেরপুর নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বাকি সব পুরসভা তৃণমূলের দখলে চলে যায়। একদা ‘কংগ্রেসের গড়’ বলে পরিচিত নদিয়া জেলায় একটিও পুরসভা দখল করতে পারেনি অধীর চৌধুরীর দল। তখন বিজেপি মানচিত্রে ছিল না। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটে নবদ্বীপ, তাহেরপুর, শান্তিপুর, গয়েশপুর ও কুপার্স বাদে বাদে বাকি ছয় পুর এলাকাতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। এর মধ্যে তাহেরপুর ও শান্তিপুরে সিপিএম লড়াইয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন অনেকে। বাকিগুলিতে তাদের লড়াই আরও অনেকটাই দুঃসাধ্য।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে অবশ্য দাবি করছেন, “মানুষ বুঝতে পেরেছে যে বিপদটা দুই তরফ থেকেই আসছে।” যা শুনে বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা কমিটির নতুন সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, “সিপিএম যত অঙ্কই কষুক, ওদের কোনও অঙ্কই মিলবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement