১০০ দিনের কাজকে হাতিয়ার করেছে সিপিএম। — ফাইল চিত্র।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাতিয়ার করেছে সিপিএম। সূত্রের খবর, বুধবার নদিয়ার বেশ কিছু পঞ্চায়েতে কাজ চেয়ে অভিযান চালায় সিপিএমের সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন। যাঁদের শ্রমপত্র (জব কার্ড) আছে, তাঁদের নিয়ে পঞ্চায়েতে হাজির হয়ে সংশ্লিষ্ট ফর্ম জমা দিয়ে কাজের আবেদন করা হয়। নেতাদের দাবি, এই কর্মসূচির মাধ্যমে একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা ও নতুন করে কাজের দাবি জানানো হয়। এর পর একেবারে তৃণমূল স্তরে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে বলে নেতাদের দাবি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কেন্দ্র একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা পাঠানো বন্ধ করেছে। নদিয়া জেলার প্রায় ৬৪ কোটি টাকা পাওনা আছে। ২০২২ সালের ৩১ নভেম্বর রাজ্যের মুখ্য সচিব শ্রমপত্র (জব কার্ড) ধারকদের বিভিন্ন দফতরের কাজে যুক্ত করার নির্দেশ দেন। বলা হয় যে, দফতরগুলি একশো দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমপত্র (জব কার্ড) ধারকদের অদক্ষ শ্রমিক হিসাবেকাজ দেবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩২৩ জন শ্রমিককে কাজ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের গড়ে প্রায় ২৫ দিন করে কাজ দেওয়া হয়েছে। শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে ৮৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৬২ দিন। কাজ হয়েছে প্রায় ১১২ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায়খুবই কম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়া জেলায় শ্রমপত্র ধারক আছেন প্রায় ১৪ লক্ষ ৭৪ হাজার। তার মধ্যে সক্রিয় আছেন প্রায় ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার। এই সময়ের মধ্যে বিকল্প কাজ পেয়েছেন মাত্র ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩২৩ জন। তাঁরা গড়ে ২৫ দিন কাজ পেয়েছেন। ফলে জেলার কয়েক লক্ষ পরিবারের মধ্যে একশো দিনের কাজ না পাওয়া নিয়ে একটা বিরাট অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
সিপিএম সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএম কাজ না-পাওয়া নিয়ে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা উস্কে দিতে চাইছে। তাই খেত মজুর ইউনিয়ন পঞ্চায়েতগুলিতে অভিযান কর্মসূচি শুরু করেছে। জেলার মোট পঞ্চায়েত আছে ১৮৫টি। তার মধ্যে ২৬টি পঞ্চায়েতে আজ বুধবার এই কর্মসূচি পালিত হয়। পরে ধাপে ধাপে সাংগঠনিক শক্তি অনুযায়ী অন্যান্য পঞ্চায়েতে এই কর্মসূচি নেওয়া হবে।
জেলা নেতৃত্বের কথায়, প্রকল্পের টাকা চুরি করেছেন তৃণমূল নেতারা। সে জন্য প্রকল্পের টাকা পাঠানো বন্ধ করেছে কেন্দ্র। আর মাঝে পড়ে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলো। তাঁদের দাবি, যারা চুরি করেছে, তাদের শাস্তি দিয়ে মানুষকে কাজ দেওয়া হোক। সার ভারত খেত মজুর ইউনিয়নের রাজ্য কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাস বলেন, “আইন অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ দিতে না-পারলে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে ভাতা দিতে হবে। আমরা সেই দাবিও তুলব। আমরা চাই গ্রামের অসহায় দরিদ্র পরিবারগুলি কাজ পাক।”
তৃণমূলের নদিয়া উত্তর জেলা কমিটির চেয়ারম্যান নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল এসে তদন্ত করে গিয়েছে। যদি দুর্নীতি হত তা হলে নিশ্চয়ই আইনানুগ পদক্ষেপ করত। বিজেপি আসলে নোংরা রাজনীতি করছে।” যা শুনে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলছেন, “তৃণমূল যে চোরের দল সেটা প্রমাণিত। অপেক্ষা করুন, সবটাই হবে।”