CPIM Leader Injured

মন্দিরে মাথা ঠেকাতে গিয়ে গুরুতর আহত বাম নেতা

স্থানীয় সূত্রে খবর, দিলীপবাবু বরাবরই ধর্মপ্রাণ। এক সময় সিপিএমের দাপুটে নেতা প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী তারাপীঠে পুজো দেওয়ার পরে দলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২১
Share:

দুষ্কৃতিদের হামলায় আহত বাম নেতা। প্রতীকী চিত্র।

প্রতি মঙ্গলবারের মতো গত মঙ্গলবারও নিজের গ্রাম পলাশিতে ঢোকার মুখেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে বজরঙবলীর মন্দিরে প্রণাম সেরে প্রণামী দিচ্ছিলেন তিনি। আর তখনই পিছন থেকে টুপি ও মাস্কে মুখ ঢাকা তিন ব্যক্তি ছুরি ও লাঠি নিয়ে চড়াও হয় ফরাক্কার সিপিএম নেতা দিলীপ মিশ্রের উপর। এখন তিনি বহরমপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, দিলীপবাবু বরাবরই ধর্মপ্রাণ। এক সময় সিপিএমের দাপুটে নেতা প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী তারাপীঠে পুজো দেওয়ার পরে দলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু মন্তব্য করেছিলেন, মৃত্যুভয় থেকে সুভাষবাবু বামপন্থী হয়েও পুজো দিতে গিয়েছিলেন। তার পরে অনেক দিন কেটে গিয়েছে। ফরাক্কাতেই এক সময় দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হয়েও দীর্ঘ দিন এলাকার কালীপুজোর উদ্বোধন করতেন আবুল হাসনাত খান। সিপিএমের প্রয়াত জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যও এক সময় একাধিক পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত থাকতেন।

আবুল হাসনাত খানের মৃত্যুর পর দিলীপ মিশ্রই ফরাক্কায় হয়ে উঠেছিলেন সিপিএমের প্রধান মুখ। এনটিপিসির ছাই সিন্ডিকেট থেকে বিদ্যুতের হাইটেনশন খুঁটি বসাতে চাষিদের কাছ থেকে জোর করে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধেও নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত স্তরে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সিপিএম ফরাক্কায় ফের রাজনৈতিক জমি ফিরে পাচ্ছিল।

Advertisement

এনটিপিসির প্রাক্তন কর্মী দিলীপবাবু ফরাক্কা উত্তর এরিয়া কমিটি ও সিটুর ব্লক কমিটির সম্পাদক। কলেজ জীবন থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, ১৯৭৭ সাল থেকে দলের সদস্য। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সিপিএমের পুরো সময়ের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সুস্মিতাও দলের মহিলা শাখার নেত্রী ও দলের সদস্য।

দিলীপবাবুর এই দর্মীয় আচরণ সম্পর্কে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, ‘‘সাধারণ ভাবে আমরা ধর্মকে প্রশ্রয় দিই না। কিন্তু সামাজিক কারণে দিলীপবাবু বলে নয়, হাসনাতদা, মৃগাঙ্কদা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। জনসংযোগের কারণেই এটা করা।’’

দিলীপ নিজেও বলছেন, “এটা কোনও হঠাৎ হামলা নয়। আমি প্রতি মঙ্গলবার ওই বজরঙবলীর মন্দিরে প্রণাম করতে যাই। সেটা জেনেই পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা। আমার সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত খারাপ সম্পর্ক নেই। আমি রাজনীতি করি। যেভাবে আমাদের দিকে মানুষের সমর্থন বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত হয়েই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই এই হামলা করেছে।”ফরাক্কার সিপিএম নেতা শ্যামল মিশ্রের অভিযোগ, “আমরা নিশ্চিত তৃণমূলই এই হামলা করেছে। দিলীপবাবু ফরাক্কায় ছাই নিয়ে সিন্ডিকেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছিলেন প্রধান প্রতিবাদী মুখ। জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধেও লড়াই সংগঠিত করেছিলেন তিনিই। তারই বদলা এই হামলা।”

তবে তৃণমূলের ফরাক্কা ব্লকের সভাপতি অরুণময় দাস বলেন, “যে রাজনীতিই করুন, দিলীপবাবুর সঙ্গে মানুষ হিসেবে আমাদের অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক। তাঁর উপর হামলা মানা যায় না। খবর পেয়েই আমি ছুটে গিয়েছি হাসপাতালে। পুলিশকে বলেছি খুঁজে বের করতে হবে, কারা এই হামলা করেছে। আমরাও দলগত ভাবে তদন্ত করে দেখছি সমস্ত ঘটনা।” কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমানে তৃণমূল নেতা মইনুল হক বলেন, “এমন হামলা কখনওই সমর্থন করা যায় না।” তৃণমূলের শ্রমিক নেতা সোমেন পান্ডে বলেন, “প্রতিবাদী স্বভাবের মানুষ দিলীপ। ভাল লোক। তার উপর হামলা ভাবা যায় না।”

তবে দিলীপবাবুর উপরে আগেও হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ এই ঘটনার পরে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গাড়ির চালক ভাস্করের কথায়, “হঠাৎই এক জন এসে গাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। তাড়া করতেই দিলীপদার চিৎকার। ছুটে যাই সেখানে। গিয়ে দেখি মাথা দিয়ে ফিনকির মত রক্ত ঝরছে। নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই বেনিয়াগ্রাম ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ৭টি সেলাই দেওয়া হয় মাথায়। তবু রক্ত বন্ধ করা যায়নি।” এরপরই তাকে রেফার করা হয় বহরমপুরে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিসিইউতে রাখা হয়েছে তাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement