শীতসকাল: রানিনগর সীমান্তে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
ঘন কুয়াশায় ঢাকা সীমান্তের পথ, জনাকয়েক চাষি ছাড়া সে পথে আর দেখা নেই কারও। সরু রাস্তা থেকে ধুলো ঢাকা ঢালু পথ অজস্র গরুর খুরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নেমে গিয়েছে পদ্মার শাখা নদীর দিকে। সেই ‘পদচিহ্ন’ গেছে নদী উজিয়ে বাংলাদেশের পানে।
শীত পড়তেই কুয়াশার আড়ালে এমনই অগুন্তি সীমান্ত পথ তৈরি হয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সীমান্তের চাষিদের দাবি, এ নতুন নয়, দীর্ঘ দিন ধরেই পাচারকারীদের গরু মোষের পায়ের চাপে নষ্ট হচ্ছে তাদের ফসল। এ বারও হবে। এবং মুখ বুজে তা সইতে হবে! বিএসএফ সে কথা কবুল করছে— কুয়াশার সুযোগ নিয়ে চোরা পথে পাচার বেড়ে যায় শীতে। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছে ভরসা— ‘ফির ভি হমলোগ অ্যালার্ট হ্যায়!’
গবাদি পশুর চলাচল যে সীমান্ত পথে শুরু হয়েছে, রানিনগর-জলঙ্গির সীমান্তে কান পাতলেই তা মালুম হচ্ছে। ভোর ফুটলে সে এলাকায় দেখা যায় চাষিদের হা-হুতাশ। কেউ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন ক্ষেতের পাশে, কেউ আবার কান্না চাপছেন ফসল ক্ষতির বহর দেখে।
মঙ্গলবার সকালেও রানিনগরের কার্গিল এলাকার দাঁড়িয়ে এক চাষি বলছেন, ‘‘মুখ ফুটে যে প্রতিবাদ করব, তার উপায় নেই। তাই মুখ বুজে সইতেই হয় এই অত্যাচার। বিঘা দুয়েক জমিতে গম চাষ করেছিলাম অনেক আশা নিয়ে, প্রায় অর্ধেক জমির ফসল গবাদি পশুর পায়ের চাপে নষ্ট হয়ে গেছে এই দিন কয়েকে।’’
চাষিদের দাবি গত বছরেও সীমান্তের মাঠে থেকে ফসল তুলতে পারেননি তাঁরা। কাতলামারি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের জয়নাল আবেদিন বলছে, ‘‘সীমান্তের এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের, দিন কয়েক আগেও বিএসএফ বেশ কিছু গরু সীমান্তের পথে আটক করেছিল। তবে এই তো শুরু, আগামী দেড়-দু’মাস ধরে কুয়াশা থাকবে, পাচারও চলবে।’’
বর্ষায় দেড়-দু’মানুষ উঁচু পাট আর শীতের কুয়াশা— পাচারের এই ‘সুসময়ে’ সীমান্তের গ্রামগুলির বড় দুর্দশা। চাষের জমিতে গরুর খুরের দাপাদাপি, আর ফসল নষ্টের নালিশে পুলিশের দিনরাতও এক হয়ে যায়। কিন্তু সুরাহা মেলে কই!