চলছে গাছ সরানো। কৃষ্ণনগরে। ফাইল চিত্র
বাড়ির পরে এ বার গাছ! আমপান ঘুর্ণিঝড়ের পর জেলায় একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না প্রশাসনকে।
ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ জায়গায় তাতে নাম জড়িয়েছে শাসকদল-ঘনিষ্ঠদের। প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে প্রকৃত ঘরহারাদের বদলে বহু সম্পন্ন এবং প্রভাবশালীদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছে টাকা। তা নিয়ে বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ-অবরোধও অব্যাহত। এরই মধ্যে আমপানে ভেঙে পড়া গাছ নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন তৃণমূলেরই এক পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। এ ব্যাপারে সরাসরি কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের কাছে লিখিত অভিযোগপত্রও পাঠিয়েছেন তিনি।
অভিযোগকর্তা করিমপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি দফতরের স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের সাঈদ বিশ্বাস। সাংসদকে লেখা অভিযোগপত্রে তিনি জানিয়েছেন, আমপান ও তার পরের কালবৈশাখী ঝড়ে বহু জায়গায় পূর্ণবয়স্ক শাল, সেগুন, শিশু, জারুলের মতো গাছ ভেঙে পড়ে। এদের কাঠ অত্যন্ত দামি। তাঁর দাবি, সেই সব গাছের সন্ধান দিয়ে তিনি স্থানীয় বিডিওকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার সেই কাঠ তুলে আনার আগেই তা উধাও হয়ে গিয়েছে। পরে তিনি জানতে পারেন, স্থানীয় একটি কাঠমিলে সেই গাছ চলে গিয়েছে! পরবর্তীতে এলাকার প্রধান রাস্তার ধারে পড়ে যাওয়া প্রায় দেড় লক্ষ টাকা মূল্যের বড় দু’টি শিশু গাছের কাঠও কে বা কারা এই ভাবে কেটে নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ধোড়াদহ ১ ও রহমতপুরের গোয়াস এলাকায় একটি করে সেগুন গাছ, দিগলকান্দী পঞ্চায়েতের রংপুর, টেইপুর ও গোয়াবাড়ি এলাকার বেশিরভাগ ভেঙে পড়া গাছের কাঠ সরকারের হাতে আসেনি। কাঠ কারবারিদের হাতে অবৈধ ভাবে চলে গিয়েছে। এ ছাড়াও মুরুটিয়া পঞ্চায়েতের সেতুর কাছে ভেঙে পড়া ৫টি গাছের মধ্যে দু’টি গাছ উদ্ধার হলেও বাকি ভেঙে পড়া গাছ উধাও হয়ে গিয়েছে।
তাঁর কথায়, “এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি, ওই গাছগুলোর কাঠ এক বড় নেতার বাড়িতে চলে গিয়েছে। বিডিও সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি জানান যে, এখন তিনি কোয়রান্টিন সেন্টার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। গাছ নিয়ে যা চলছে এমন দুর্নীতির সঙ্গে আপস করা সম্ভব নয়।’’ দলেরই এক জনের এমন বক্তব্যে স্বভাবতই অস্বস্তিতে রয়েছে তৃণমূল। শনিবার সাঈদ বিশ্বাস বলেন, “আমার অভিযোগ পেয়ে সাংসদ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
যদিও করিমপুর ২ বিডিও সত্যজিৎ কুমারের দাবি, ‘‘ঝড়ে পড়া গাছ উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। ব্লকের আয়তন অনেক বড়। এ বারের ঝড়ে প্রচুর গাছ ভেঙে পড়েছে। প্রায় সমস্ত ভাঙা গাছ দফতরের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করে এনেছেন। তবে তার মধ্যে কয়েকটি গাছ সকলের অগোচরে কেউ নিয়ে যেতে পারেন।’’ আর নদিয়ার জেলা শাসক বিভু গোয়েলের মন্তব্য, ‘‘ঝড়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙেছে। সব জায়গায় বিডিওরা সব রকম ব্যবস্থা করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ওই সব গাছ নিলাম ডেকে বিক্রি করা হয়। করিমপুর ২ ব্লকে কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’