বহরমপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলরতন আঢ্য।
দলের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই কোন ঠাসা তিনি। দলের মেজ-সেজ নেতার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় দলীয় কর্মসূচিতেও দেখা যায় না তাঁকে। বহরমপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলরতন আঢ্যের বিরুদ্ধে এ বার আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপোষণ করে পুরসভায় চাকরি দেওয়া, ওই চাকরির জন্য ঘুষ চাওয়া এবং পুরসভার সম্পত্তির অবৈধ নথি পেশ করে নিজের কব্জায় রাখার অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছেন বহরমপুর নিবাসী জনৈক রেবা শর্মা নামে এক মহিলা। ওই মহিলার আইনজীবী সূর্যনীল দাশ বুধবার জানান, প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ নিয়ে পুরসভার বর্তমান প্রশাসক তথা বহরমপুরের মহকুমাশাসক, মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক, মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তা-ব্যক্তির কাছে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একাধিক বার অভিযোগ জানানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও আইনি পদক্ষেপ না করায় বাধ্য হয়ে প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই মহিলা।
মহিলার আইনজীবী জানান, ডিভিশন বেঞ্চের কাছে আবেদন করা হয়েছে, এই সমস্ত অভিযোগের তদন্ত কোনও নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে করানো হোক। এ-ও বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার এই সমস্ত অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই বুঝতে পারবে কোনও আইন না-মেনে বহরমপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান কীভাবে স্বজনপোষণ করেছেন এবং সরকারি টাকা তছরুপ করেছেন।
মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী সূর্যনীল জানান, প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি হল: ১) পুরসভার জমিতে দোকানঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে গরিব মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা ঘুষ নেওয়া, ও নিজের পরিজন, পরিচিতদের সেই সমস্ত দোকানঘর পাইয়ে দেওয়া। ২) অভিযোগ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান একটি সংস্থার নামে ব্যবসা চালাচ্ছেন। চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০১৮ সালে বিভিন্ন চেক মারফত প্রচুর টাকা ওই সংস্থাকে পাইয়ে দিয়েছেন। ৩) আরও অভিযোগ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান তাঁর ছেলের সঙ্গে ২০১২ সালে দোকানঘর নিয়ে একটি চুক্তি (ডিড এগ্রিমেন্ট) করেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রাক্তন চেয়ারম্যানের ছেলে ওই দোকানঘরের ভাড়া দিচ্ছেন না। তিনি জোর করে দোকানঘর দখল করে রেখেছেন। ৪) অভিযোগ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান অবৈধ নথি পেশ করে পুরসভার বিভিন্ন সম্পত্তি স্থানীয় গুন্ডাদের দিয়ে নিজের কব্জায় রেখেছেন। আরও অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা হয় তিনি আত্মসাৎ করেছেন নয়ত
অন্যত্র সরিয়েছেন।
ওই আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেল পুরসভার চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনও কারণে তিনি চাকরি পাননি। ওই মহিলার অভিযোগ, চাকরির জন্য তিনি প্রাক্তন চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তাঁর কাছে প্রচুর টাকা ঘুষ চাওয়া হয়। রেবা শর্মা মামলার আবেদনে জানিয়েছেন, তিনি তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে পেরেছেন, পুরসভার বিভিন্ন দরপত্র (টেন্ডার) দেওয়ার আইনি নথি মিলছে না। বিল মেটানোর নথিও মিলছে না বলে তাঁর অভিযোগ।
তাঁর আইনজীবী জানান, মামলার আবেদনে বলা হয়েছে ১৯৯৩ সালের রাজ্য পুর আইনে স্পষ্ট রয়েছে, কোনও পুরসভার কোনও প্রকল্পের কাজের তদারকির দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক অথবা 'ডিরেক্টর অব লোকাল বডিজ' করবেন। এক্ষেত্রে সেই তদারকি করা হয়নি বলে অভিযোগ।
এ নিয়ে নীলরতনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় চিকিৎসার জন্য এসেছি। আমার কাছে এই বিষয়ে কোনও খবর নেই। তাই এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না। যাঁরা অপপ্রচার করছেন তাঁরা-ই জানেন কোথায় কোন মামলা দায়ের হয়েছে।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি আবু তাহের খানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অভিযোগ বা মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। দলের পক্ষ থেকেও কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি।’’ তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ যে কোনও আদালতে মামলা দায়ের
করতেই পারেন।’’
তবে, বিষয়টি নিয়ে শাসকদলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধী কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, "রাজ্য সরকারের উচিত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করে অঅভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা। তাহলেই সব দুর্নীতি সামনে আসবে।’’ জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী জানান, এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, রাজ্য পুলিশের এডিজি (সিআইডি), মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বহরমপুরের মহকুমাশাসক এবং পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলরতন আঢ্যকে।
আগামী সপ্তাহে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই জনস্বার্থ মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।