প্রতীকী ছবি।
দেড় মাস ধরে লকডাউন চলছে। মিলছিল না ওষুধও। তার জেরে চিকিৎসা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত এক নাবালকের। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় এক শিক্ষিকার চেষ্টায় ওষুধ মিলেছে।
বেলডাঙার বেনাদহ গ্রামের বাসিন্দা ১১ বছরের ইমরান আলি গত আড়াই বছর ধরের হাড়ের ক্যানসারে ভুগছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার এন আর এস হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। ইতিমধ্যে ইমরানের ১৭টি কেমোথেরাপি হয়ে গিয়েছে। তার ‘ওরাল কেমোও’ শুরু হয়ে গিয়েছিল মাসকয়েক আগে। তবে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবারের লোকজন তাকে আর হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। ফলে বন্ধ থমকে গিয়েছে কেমোথেরাপিও। স্থানীয় সূত্রে খবর, ইমরানের বাবা রেজাউল শেখ একটি দর্জির দোকানের কর্মী। আয় সামান্য। লকডাউন চলায় গত দেড় মাস তাঁর কোনও রোজগারও নেই। রেজাউল বলেন, ‘‘এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ছেলের ওষুধ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওষুধ না পেয়ে যন্ত্রণায় সারারাত বিছানায় কাতরাত ছেলে। কিন্তু আমার সঙ্গতি নেই। কোথা থেকে ওষুধ জোগাড় করব, সেটাই মাথায় আসছিল না।’’ ইমরানের মা নার্গিস বিবি বলেন, “চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ছেলের রোগ ধরা পড়েছিল। ছেলেকে নিয়মিত কলকাতায় নিয়ে যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু লকডাউনে বাস, ট্রেন বন্ধ। ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানান ওরাল কেমো দেওয়া যাবে। কিন্তু ওষুধ বেলডাঙা, বহরমপুরে পাওয়া যায়নি।’’ কিন্তু কী করে ওষুধ মিলল? নার্গিস জানান, লকডাউনে ছাত্রীরা কেমন আছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে তাঁদের গ্রামে এসেছিলেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন। ইমরানের কষ্টের কথা জানতে পারেন তিনি। এরপর তিনি রেজাউলের বাড়িতে যান। সব শোনার পর তিনি নিজের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ওই ওষুধের ব্যাপারে খোঁজখবর নে। যদিও তিনি ওষুধের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তারপর ফেসবুকে এ নিয়ে পোস্ট করেন তিনি। তা দেখে কলকাতার একটি সংস্থার দুই সদস্য তিতাস ভৌমিক ও অনির্বাণ দে একটি বেসরকারি হাসপাতালে থেকে নিজেদের টাকায় ওই ওষুধ কিনে দিয়েছেন। জেলার বাসিন্দা জামির মোল্লার ব্যবস্থাপনায় ওষুধ পৌঁছয় পলাশিতে। সেখান থেকে এক ব্যক্তি তা পৌঁছে দেন বেনাদহে। যদিও তাতে দুশ্চিন্তা পুরোপুরি যাচ্ছে না নার্গিসদের। তিনি বলেন, ‘‘২১ দিনের ওষুধ পেয়েছি। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়লে কী হবে তা ভেবেই অস্থির হয়ে যাচ্ছি।’’