বাড়ি ফেরার পরে লতিফ, লালন।
সাইকেলের প্যাডেলে ভর করেই তিন দিন তিন রাত ধরে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ঘরে ফিরলেন হরিহরপাড়ার তিন শ্রমিক। সাইকেল অবশ্য দু’টি। চালিয়েছেন পালা করে। ঘুম হয়নি। পেটেও তেমন কিছু পড়েনি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ বাড়ি ফেরেন তাঁরা। হরিহরপাড়ার সুন্দলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ, আলিনগর গ্রামের লালন সেখ ও সাহাজাদপুর গ্রামের বাসিন্দা রমজান শেখ প্রায় ছ’বছর ধরে ওড়িশার রাজনগর এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন। পরবে বছরে দু-একবার ঘরে ফেরেন তাঁরা। কিন্তু দেশ জুড়ে লকডাউন জারি হতেই তাঁ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মেলেনি পারিশ্রমিক। এদিকে ঘরে বসে খেতে গিয়ে শেষ হয়ে আসছিল পকেটের টাকা। তা ছাড়া দোকানপাটও বন্ধ। তখনই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বাড়িই ফিরে যাবেন। পথে বাধা বিপত্তি এসেছে। বাড়ি ফেরার তাড়ায় সে সব কাটিয়েছেন কোনও মতে।
লালন বলেন, ‘‘রাস্তায় সব হোটেল বন্ধ। কখনও বিস্কুট, কখনও কলা খেয়ে কাটাতে হয়েছে।’’ একটি সাইকেলের টিউবও নষ্ট হয়ে যায়। আব্দুল লতিফ বলেন, ‘কোনও মতে এক সাইকেল দোকানদারকে কাকুতিমিনতি করায় আড়াইশো টাকায় একটি নতুন টিউব লাগিয়ে দেয়।’’
লতিফের স্ত্রী উনজিলা বিবি বলেন, ‘‘ঘরে ফিরেছে এই খুব। একবেলা না খেয়ে থাকলেও দুশ্চিন্তা তো দূর হল।’’ প্রথমে বেনেকোলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন লালন ও লতিফ দুই ভাই। সেখানে সজনে ডাঁটা-আলুর তরকারি, ওমলেট আর ভাত খেয়ে হরিহরপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। চিকিৎসক পরামর্শ দেন আগামী ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে থাকতে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুল লস্কর বলেন, "আপাতত সকলের শারীরিক অবস্থা ভাল। ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।’’