ছবি পিটিআই।
গোটা বার্নিয়া নয়, শুধু মাত্র শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামকেই স্পর্শকাতর ঘোষণা করল নদিয়া জেলা প্রশাসন। কয়েক দিন আগে এই গ্রামেই দিল্লি ছুঁয়ে আসা একই পরিবারের পাঁচ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। যে কারণে এই এলাকায় রাজ্য প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি রয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি।
শনিবার রাতেই শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে মাইকে প্রচার করেছিল তেহট্ট মহকুমা প্রশাসন। সেই মতো রবিবার থেকে গোটা গ্রামকে ব্যারিকেড দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি-বাড়ি খাবার ও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। বার্নিয়া বাজারে সোম ও শুক্রবার যে হাট বসত তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
শুধু ঘরের বাইরে বার হওয়া নয়, শ্রীকৃষ্ণপুর থেকে কেউ যাতে এলাকার বাইরে বার হতে না পারে বা বাইরে থেকে কেউ যাতে এই এলাকায় ঢুকতে না পারে, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। তেহট্টের বার্নিয়া বাজার-সহ শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রাম ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা হয়েছে। গ্রামে ঢোকার চারটি রাস্তাও ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। সর্বক্ষণ পুলিশ প্রহরা থাকছে।
শ্রীকৃষ্ণপুরের বাসিন্দারা যাতে প্রশাসনের কাছে খাবার, জল, ওষুধ চাইতে পারেন তার জন্য দু’টি হেল্পলাইন নম্বর (৯৬৪১৮৪৪৬৯১ এবং ৭৪৭৯১০৯৮০৫) দেওয়া হয়েছে। শনিবার থেকেই মাইকে এই নম্বর দু’টি প্রচার করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নির্ধারিত বাজার দরে বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বার্নিয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির কর্মকর্তাদের। তেহট্ট ২ ব্লক প্রশাসন তাঁদের সহযোগিতা করছে।
শনিবার সন্ধ্যায় মাইকে নিষেধাজ্ঞার কথা প্রচারের পরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার ব্যস্ততা শুরু হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণপুরে। সেই খবর চাউর হতে বার্নিয়াতেও কেনাকাটার হিড়িক লেগে যায়। তবে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল থেকেই শ্রীকৃষ্ণপুরের বাড়ি-বাড়ি চাল, ডাল, আলু, আনাজ, জল ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা সুধীর রায় বলেন, “প্রশাসন যে হেল্পলাইন নম্বর দিয়েছে তাতে ফোন করে এক ঘণ্টার মধ্যেই চাল আর ডাল পেয়েছি।” তবে দুধের জোগানের ব্যবস্থা এ দিন হয়নি। প্রশাসনিক সূত্রে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, আজ, সোমবার থেকে বাড়ি-বাড়ি দুধ পৌঁছে দেওয়া হবে।
শনিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত দেওয়ান, কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অরুণকুমার কোলে ও তেহট্ট মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈকত বসু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ৩৬ জনের একটি মেডিক্যাল টিম বার্নিয়ায় ষান। পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে তাঁরা সাড়ে সাতশো পরিবারের মোট এগারশো লোককে পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে এক জনের জ্বর ও সর্দি-কাশির লক্ষণ দেখা গিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। তাঁকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কর্তাদের দাবি, করোনার অন্য উপসর্গ থাক বা না থাক, কোনও রকম ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে না। রোজই তেহট্ট মহকুমার পাঁচটি মেডিক্যাল টিম ওই গ্রামে গিয়ে বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা চালাবেন। তথ্য সংগ্রহ করবেন। পর্যাপ্ত সংখ্যক কিট আসার পরে প্রয়োজনে র্যাপিড টেস্টও করা হতে পারে।
সহ-প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার