আনসার আলির শোকার্ত পরিবার । নিজস্ব চিত্র
লকডাউনে গৃহবন্দি, সুদূর কেরল থেকে দিনে দু’বেলা ফোনে কথা হত। ঘুরেফিরে একটাই কথা বলতেন তিনি— ‘আর বোধহয় ঘরে ফেরা হল না রে!’
আক্ষেপটা যে এমন সত্যি হয়ে যাবে কে জানত! ডোমকলের কুচিয়ামোড়ার আনসার আলির কাছে সেই সুদূরই থেকে গেল। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানকার একটি হাসপাতালে মৃত্যু হল পরিযায়ী শ্রমিক আনসারের। তাঁর পরিবারের দাবি, দুশ্চিন্তা থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ১৪ এপ্রিল ঘরে ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, লকডাউন বেড়ে যাওয়ায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছিল ৪২ বছরের ওই যুবকের। পুলিশ জানায়, কেরলের স্থানীয় প্রশাসন মৌখিকভাবে জানিয়েছে, আনসারের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কথা। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার ছিল আনসার আলি শেখের। কেরলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন তিনি। মাস চারেক আগে সেখানে গেলেও রমজান মাসের আগেই ঘরে ফেরার কথা ছিল তাঁর। এমনকি ফোনে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, এ বার ফিরতে পারলে একেবারে ইদ সেরেই ফিরবেন। কিন্তু লকডাউনের ফাঁদে পড়ে ঘরে ফেরা হয়নি আর। তাঁর স্ত্রী রাফিয়া বিবি বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগেও বলেছিলেন, আর কয়েক দিনের মধ্যেই ঘরে ফিরবেন। কিন্তু লকডাউন সব হিসেব তছনছ করে দিল।’’নাবালক দুই ছেলে স্কুলে পড়ে। দু’বেলা হাঁড়ি চাপে কেরল থেকে হাড়ভাঙা খাটুনির উপার্জনে। মৃতের ভাইপো নারবুল শেখ বলছেন, ‘‘লকডাউনের পর থেকেই মনটা ভাল ছিল না কাকার। সব সময় বলছিল, আমার কি আর ঘরে ফেরা হবে, কিন্তু এ ভাবে যে চলে যাবে ভাবিনি।’’সোমবার রাত থেকেই মাথায় যন্ত্রণা, মঙ্গলবার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলের সহকর্মীরা। সেখানেই মারা যান তিনি। কেবল আনসার শেখ নন, ভিন রাজ্যে আটকে পড়া ডোমকলের হাজার হাজার পরিবার এখন উদ্বেগে। প্রশাসনের কাছেও তারা আবেদন জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে আনার জন্য। আনসারের মৃত্যু সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)