পিটিআইয়ের তোলা ফাইল ছবি।
লকডাউনের জেরে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই জেলায় শিশু ও গর্ভবতীদের রুটিন টিকাকরণ কর্মসূচি বন্ধ। শিশুস্বাস্থ্যে টিকাকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। একাধিক রোগ থেকে আজীবন শিশুদের শরীরে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ তৈরি হয়। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে গর্ভবতীদের টিকাকরণও অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো মূলত করোনা মোকাবিলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। অভিযোগ, সে কারণেই থমকে যাচ্ছে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
বিভিন্ন ব্লকের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতি মাসেই একাধিক দিন টিকাকরণ কর্মসূচি থাকে। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এলাকার জনসংখ্যার নিরিখে ওই টিকাকরণের দিনের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। তবে এলাকার জনসংখ্যা যতই কম হোক না কেন, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে মাসে অন্তত চারটি করে শিবির করতেই হয়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের জেরে এপ্রিল মাসে নদিয়া জেলায় শিশুদের টিকাকরণের কোনও শিবির হয়নি বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। এই কর্মসূচি চালাতে হলে সামাজিক দূরত্বের নীতি সব সময় মেনে চলা যাবে না মনে করেই তা করা হয়নি বলে একাধিক এএনএম ও নার্সেরা জানিয়েছেন। তাঁরাই মূলত এই কর্মসূচিতে টিকা দেওয়ার কাজ করেন। অনেক জায়গায় অবশ্য চিকিৎসকেরাও তা করেন। তবে চিকিৎসকেরা বেশিরভাগই এখন কোভিড মোকাবিলায় ব্যস্ত। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত। এর সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। হয়তো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা ফের রুটিন টিকাকরণ চালু করতে পারব।’’
জেলায় আশা কর্মীরাই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে টিকাকরণের খবর দেন। তেহট্ট মহকুমার আশাকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৯ মার্চ পর্যন্ত শিশুদের টিকাকরণ চলেছিল। তার পর থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তেহট্টের একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এএনএম মিতা বিশ্বাস জানাচ্ছেন, পেন্টাভ্যালেন্ট, বিসিজি, ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন, হেপাটাইটিস ভ্যাকসিনের মতো যত টিকা রুটিন টিকাকরণে দেওয়া হয়, সবই বন্ধ। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আবার নির্দেশিকা জারি করলে টিকাকরণ শুরু হবে। শিশুদের পাশাপাশি গর্ভবতীদের টিকাকরণও বন্ধ রয়েছে।
পোলিয়ো, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, নিউমোনিয়া, হেপাটাইটিস-বি-এর মতো একাধিক রোগের সংক্রমণ আটকাতে শিশুদের টিকা দেওয়া হয়। রোটা ভাইরাস, হাম, রুবেলার মতো রোগের টিকাও রয়েছে। সব এখন বন্ধ।
কালীগঞ্জের এক স্বাস্থ্যকর্মী জানাচ্ছেন, মাসে এক দিন শিশুদের বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু করোনা জন্য টানা এক মাস তা বন্ধ রয়েছে। গত ১ এপ্রিল বিসিজি টিকার দিন থাকলেও তা বাতিল করে দেওয়া হয়। শিশুর জন্মের সময়েই ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। পরে দেড় মাস, আড়াই মাস, সাড়ে তিন মাস ও ১৬ মাস বয়সে ওই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। অন্য টিকারও নির্দিষ্ট একটা সময় রয়েছে। নির্দিষ্ট ব্যবধানে তা দিতে হয়। একটি দেওয়ার সময় গোলমাল হয়ে গেলে বা পিছিয়ে গেলে পুরো ব্যবস্থাটা গুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
তথ্য সহায়তা: সাগর হালদার