এই সাইকেলেই গয়া থেকে শমশেরগঞ্জে। —নিজস্ব চিত্র।
সেই সাইকেলই ভরসা। লকডাউনের ছায়ায় প্রায় যোগাযোগহীন দেশে দু’চাকার সাইকেলে প্যাডেলে চাপ দিয়েই তাঁরা ভেসে পড়েছিলেন বিহারের গয়া থেকে শমসেরগঞ্জের দিকে। দলের চার জন সাইকেল চালাতে জানেন না। তাই দশ জনের ৬টি সাইকেলে পিছনে সহকর্মীকে বসিয়ে মাইলের পর মাইল উজিয়ে সুতির দশ শ্রমিক ফিরলেন আপন গাঁয়ে।
শনিবার সকাল দশটা নাগাদ তাঁরা সুতি পৌঁছন। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় অনুপনগর হাসপাতালে। সেখানে তাঁদের পরীক্ষার পরে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি মেলে। শমসেরগঞ্জের নামোচাচন্ড ও সুতির বাজিতপুর গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা। শমসেরগঞ্জের নামোচাচন্ডের নইমুদ্দিন শেখ, কেতাবুল হক, সুতির মদনা গ্রামের চিটুল শেখ ও ইয়ারুল মোমিন বছর তিনেক ধরে গয়ায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁদের ভরসাতেই এলাকার অন্য যুবকেরা গয়ায় গিয়েছিলেন রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে। পরবে দু’বার দেশে ফেরেন তাঁরা, এটাই চেনা রেওয়াজ। কিন্তু মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশ স্তব্ধ হয়ে পড়ায় সেই সুদূর প্রবাসে আটকে পড়েছিলেন ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা। যেটুকু সঞ্চয় ছিল তা শেষ হয়ে যাওয়ায় না-খেতে পেয়ে বাঁচার চেয়ে ঘরের পথেই ভেসে পড়েছিলেন তাঁরা। পুরনো সাইকেল জোগাড় করে ‘দেশে ফেরার টানে’ আর পিছনে তাকাননি।
কেতাবুল বলেন, ‘‘বাড়ি যাব, সে যে ভাবেই হোক, আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম। রাস্তায় বেরিয়ে দেখি হোটেল বন্ধ। শুধু মুদির দোকান খোলা। সেখান থেকে বিস্কুট খেয়ে আবার পাড়ি। কোথাও মানবিক পুলিশ খাবার দিয়েছেন। কোনও গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে গ্রামবাসীরাই এগিয়ে দিয়েছেন খাবার। সাইকেল চালিয়ে ক্লান্তিতে শরীর যখন আর চলতে চাইত না, তখন কোনও ডাক্তারখানায় ওষুধ নিয়ে খেয়ে আবার সাইকেলের প্যাডেলে পা দিয়ে এগিয়ে গিয়েছি।’’ ইয়ারুল মোমিনের মা ফরিদা বিবি কাঁদছেন, বলছেন, ‘‘ছেলে ঘরে ফিরেছে এই খুব। এখন আর কিচ্ছি ভাবছি না। এ ক’দিন যে ভাবে গেল!’’