প্রতীকী চিত্র
পড়াশোনা বেশি হয়নি। সংসারের হাল ফেরাতে যেতে হয়েছে রাজ্য ছেড়ে। গত চার বছর আগে চুল ফেরির কাজ নিয়ে বিহারের হাজিপুরে। সেখানে আমাদের এলাকার অনেকেই থাকেন। তাঁদের সঙ্গে থেকে খুব কষ্টে আয় হচ্ছিল। সংসারে টাকা পাঠানো চলছিল। চার ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীর সংসার কোন রকমে চলে যাচ্ছিল। তার করোনা আবহের মধ্যে লকডাউন শুরু হয়। কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সব সময় ভয় ভয় করছিল। রাস্তায় গেলেই পুলিশের হাতে পড়তে হচ্ছিল। কিন্তু লকডাউন কবে শেষ হবে তা বোঝা যাচ্ছিল না। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আমাদের সঙ্গে ২৭ জন শ্রমিক হাজিপুর থেকে বেলডাঙা ফেরার উদ্দেশে প্রথম দিকে রওনা দেয়। একটা আনাজের ট্রাকে কোনও রকমে আমাদের যাত্রা শুরু হল। ১৫০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রাস্তায় পুলিশ গাড়ি আটকায়। পুলিশ বলে লকডাউনের মধ্যে এতো মানুষ কোথায় যাবে। ট্রাকের চালককে পুলিশ বলে, যে স্থান থেকে তুলে এনেছো, সেখানে রেখে এসো। ট্রাক চালক তখন নিজের বুদ্ধিতে নিজের চেনা গ্রামীণ সড়ক ধরে এগিয়ে যেতে শুরু করে। তখন রাত্রির অন্ধকার। বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর গ্রামের মানুষ গ্রামে গ্রামের মধ্যে মানুষ ভর্তি ট্রাক দেখে ঘিরে ধরে। আমরা তাঁদের সব কথা বুঝতে পারিনি। ফলে উত্তরও দিয়ে পারিনি। বিহারের ওই অপরিচিত গ্রামের মানুষ তখন আমাদের তাড়া করে। সেখানে গ্রামবাসীরা আমাদের মারধর করে। এই অবস্থায় গাড়ি থেকে যে যেমন পালিয়ে যায়।
তখন আমাদের মধ্যে ১৬ জন বিছিন্ন হয়ে যায়। পরে ১১ জন হাঁটতে শুরু করি। আমাদের দেখে প্রথমে বিহারের কোটোরিয়া ব্লক প্রশাসন আমাদের প্রথম নিভৃতবাসের ব্যবস্থা করে। ১৪ দিন সেখানের একটা বাড়িতে পুরো আটকে যায়। পরে সেখান থেকে হাঁটা পথে বাঁকা ব্লকে পৌঁছায়। সেখানেও পুনরায় আমাদের নিভৃতবাস শুরু হয়। সব মিলে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার হেঁটে বিহারের বাঁকা জেলায় পৌঁছই। সেখানেও নতুন করে নিভৃতবাস শুরু হয়। এই নিয়ে তিন বারের নিভৃত বাস। বেলডাঙার আমাদের পাড়ার সুজন আহমেদ, বেলডাঙার বিধায়ক ও বেলডাঙার বিডিও নানা ভাবে আমাদের ভরসা জোগাতে লাগলো। শেষে পেঁয়াজ নিয়ে যায় এমন একটা ট্রাক আমাদের জন্য ব্যবস্থা করে দিল ওরা। সেই গাড়ির ভাড়া ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু সেই ভাড়া তারা আমাদের থেকে নেয়নি। কারণ আমরা বলেছিলাম আমাদের কাছে কোনও টাকা নেই। আমরা খাওয়ার টাকাও নিজের কাছে রাখতে পারনি। শেষে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সেই ট্রাকে উঠলাম। অনেক পথ পেরিয়ে খুব কষ্টে
বাড়ি পৌঁছলাম।