—ফাইল চিত্র।
ধর্মস্থানে ভক্তদের প্রবেশে সরকারি ভাবে আর বাধা নেই। চতুর্থ পর্বের লকডাউন শেষে আগামী ১ জুন থেকে রাজ্যে অনেক বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার কথা শুক্রবার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে ধর্মস্থানও। তবে আপাতত সাধারণের জন্য দরজা খুলছে না নবদ্বীপ বা মায়াপুর-সহ নদিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কিছু মঠমন্দির।
সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, জুনের প্রথম দিন থেকেই ধর্মস্থানগুলিতে একেক বারে সর্বাধিক দশজন করে ভক্ত একসঙ্গে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে জেলায় বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন মন্দির বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে নবদ্বীপের ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দির, তেমনই আছে মায়াপুরের ইস্কন মন্দির। খুলছে না কৃষ্ণগঞ্জ শিবনিবাসের শিবমন্দির বা মণিপুর রাজবাড়ির অনু মহাপ্রভু মন্দির।
অন্য দিকে, গির্জা খোলার বিষয়ে বিশেয আগ্রহী নন কৃষ্ণনগর চার্চের কর্তৃপক্ষও। কৃষ্ণনগর চার্চের লেইতি কমিশনের রিজিওনাল সেক্রেটারি সমীর স্টিফেন লাহিড়ী বলেন, “ওই ভাবে নির্দিষ্ট করে দশজন নিয়ে গির্জায় প্রার্থনা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে গির্জা খোলা থাকলে কেউ বড়জোর একা এসে ব্যক্তিগত ভাবে প্রার্থনা করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পশ্চিমবঙ্গ বিশপ কাউন্সিল।” তবে নিয়ম মেনে মসজিদের দরজা খুলতে চাইছেন মহীশূরা বড় মসজিদের ইমাম সরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ মেনেই মসজিদে নমাজ পড়া শুরু হবে।’’
নদিয়ার পর্যটক আকর্ষণের প্রধান দুই কেন্দ্র নবদ্বীপ এবং মায়াপুরের প্রধান প্রধান ধর্মস্থানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে এখনই নয়, পরিস্থিতি বুঝে ভক্তদের জন্য মন্দির খুলে দেওয়ার কথা ভাবা হবে। গত কয়েকদিনে জেলার সর্বত্র যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, তারপর কেউ ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
নবদ্বীপের মহাপ্রভু মন্দির, পোড়ামা মন্দির, ভবতারিণী মন্দির, প্রাচীন মায়াপুরের চৈতন্য জন্মস্থান মন্দির, সোনার গৌরাঙ্গ মন্দির, রাধারমণ বাগ সমাজবাড়ি, হরিসভা মন্দির আপাতত বন্ধ থাকছে। মায়াপুর ইস্কন মন্দিরের তরফেও জানানো হয়েছে এখনই মন্দির খোলা নিয়ে ভাবা হচ্ছে না। আপাতত বন্ধ থাকছে কৃষ্ণগঞ্জে শিবনিবাসের শিবমন্দিরও।
বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী সেবিত নবদ্বীপের ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরের পরিচালন সমিতি বিষয়টি নিয়ে শনিবার এক বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপাতত মন্দির যেমন বন্ধ আছে, তেমনই থাকবে। সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “ওই ভাবে দশজন করে মন্দিরে প্রবেশের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। ওই পরিকাঠামো আমাদের নেই। আগামী ৩০ জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত মন্দির বন্ধই থাকবে। পরিস্থিতি বুঝে ওই দিন ফের আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” একই অভিমত নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুরের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান অদ্বৈত দাস মহারাজের। তিনি বলেন, “মহাপ্রভুর জন্মস্থানে প্রবেশ ওই ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আপাতত পনেরো দিন যেমন চলছে তেমন চলবে।” কেশবজি গৌড়ীয় মঠের মঠাধ্যক্ষ মধুসূদন ব্রহ্মচারী বলেন, “ভিতরে যাঁরা আছেন সেই মানুষদের সুস্থ রাখাটাও জরুরি। ফলে আপাতত কোনও ভাবেই ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।”
যদিও ১ জুন থেকে ভক্তদের জন্য দরজা খুলে যাচ্ছে নবদ্বীপের মদনমোহন এবং বলদেব মন্দিরের। দুই মন্দিরের সেবায়েতদের তরফে যথাক্রমে নিত্যগোপাল গোস্বামী এবং কিশোর গোস্বামী জানান, ভক্তরা ভীষণভাবে চাইছেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মন্দির খুলে দেওয়া হচ্ছে।