Coronavirus Lockdown

ভাঙা কোমরে ঘরেই ছটফট

কিশোর বয়স থেকে আলি নওয়াজের পেশা দিনমজুরি। সেই কাজ না থাকলে ভ্যান চালান।

Advertisement

কৌশিক সাহা

বড়ঞা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৬:০১
Share:

নওয়াজ শেখ। নিজস্ব চিত্র

চার মাস আগে লছিমন ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে কোমরের অংশে হাড় ভেঙে গিয়েছিল। কান্দি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন বড়ঞার সাটিতারা গ্রামের আলি নওয়াজ শেখ। চিকিৎসক পরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। কান্দিতে ওই অস্ত্রোপচার করার সুযোগ নেই। তা করাতে হবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কিংবা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মতো বড় হাসপাতালে। কিন্তু এরই মধ্যে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় বহরমপুরে যেতে পারেননি বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তি। নওয়াজ বলেন, ‘‘হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করা হল। রোজগার বন্ধ। এই অবস্থায় কয়েক হাজার টাকা খরচ করে বহরমপুরে যেতে পারিনি।’’ অগত্যা বাড়িতেই কোমরের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

কিশোর বয়স থেকে আলি নওয়াজের পেশা দিনমজুরি। সেই কাজ না থাকলে ভ্যান চালান। আগে প্যাডল ভ্যান চালাতেন। এখন তাঁর সম্বল যন্ত্রচালিত ভ্যান গ্রামীণ এলাকায় যার নাম লছিমন। ভ্যান চালিয়েই পাঁচ মেয়ে এবং এক ছেলেকে প্রতিপালন করেছেন তিনি।

নওয়াজ বলেন, ‘‘মাস চারেক আগে ভ্যান নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম যাত্রীর আশায়। সেই সময় পিছন থেকে একটি ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে। ভ্যানের সিটে বসে ছিলাম। সজোরে ধাক্কায় ছিটকে রাস্তায় পড়ে যাই। কোমরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছিল। ব্যথার ওষুধ খেয়েও কমছিল না। তখনি বুঝতে পারি, নির্ঘাৎ হাড় ভেঙেছে।’’ সাত দিন ওই অবস্থাতেই বাড়িতে ছিলেন তিনি। যন্ত্রণায় শুয়ে কাটিয়ে ছিলেন তিনি। রাতের ঘুম পর্যন্ত উড়ে গিয়েছিল। ব্যথায় আর থাকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত কান্দি মহকুমা হাসপাতালে যান। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, তাঁর কোমর এলাকার একটি হাড়ে ফাটল ধরেছে। অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন এবং তা করাতে হবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কিংবা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় লকডাউনের মধ্যে আর বহরমপুরে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁর।

Advertisement

টানা লকডাউনে কর্মহীন নওয়াজের একমাত্র ছেলে আলাউদ্দিন। তিনি বললেন, ‘‘ওষুধ কেনার টাকাও নেই। ডাকবাংলো বাজারে একজন গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে বাবাকে নিয়ে যাচ্ছি। ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মাহে আলম।’’ তিনি বলেন, “এখন বর্ধমান বা অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করানোর ঝক্কি অনেক। লকডাউনের সময় যানবাহন চলছে না বললেই চলে। দেখছি কী করা যায়।’’ নওয়াজ বলেন, “আমি ও ছেলেই রোজগেরে। কিন্তু লকডাউনে আয় বন্ধ। রেশন থেকে পাওয়া চালেই দু’মুঠো ভাত পাচ্ছি। জানি না কত দিন এই যন্ত্রণা

সইতে হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement