ছবি: পিটিআই।
নতুন করোনা রোগীর খোঁজ মেলায় প্রশাসন যত না উদ্বিগ্ন তার থেকেও বেশি চিন্তিত ভিন রাজ্য থেকে আসা ওই শ্রমিকেরা হোম কোয়রান্টিন বা গৃহবাসে থাকার নিয়ম মেনে না চলায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত রবিবার তেহট্ট ও থানারপাড়ায় ভিন রাজ্য থেকে আসা দুই শ্রমিকের লালারসের নমুনা পরীক্ষা পজিটিভ আসে। এর পর তাঁদের কল্যাণী কার্নিভাল কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু, দু’জনের ক্ষেত্রেই অভিযোগ, অন্য রাজ্য থেকে ফিরে তাঁরা চোদ্দো দিন গৃহবাসে থাকার নিয়ম মেনে চলেননি। উল্টে সেই সময় পাড়ার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা, এমনকি পিকনিক পর্যন্ত করেন!
এর পর তাঁদের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসায় এলাকায় অসম্ভব আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিক্ষোভও হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তাঁদের অবাধ মেলামেশায় সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা চিন্তা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য দফতরেরও। এত প্রচার সত্ত্বেও এখনও অনেককে সচেতন করা যাচ্ছে না বলে স্বাস্থ্যকর্তারা উদ্বিগ্ন।
করোনা চিত্র
• মোট আইসোলেশন ওয়ার্ড-৯টি।
• বেড সংখ্যা-৩৩৮ টি।
• জেলায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে-৯৬৫ জনকে।
এখনও পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে-৮০২ জনকে।
• সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত নতুন করে ভর্তি করা হয়েছে-১৮ জনকে।
• ভর্তি আছে-১৬৩জন।
• মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে-২১৫৯ জনের।
• সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত নতুন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে-২৯৩ জনের।
• এখনও পর্যন্ত রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে-৯৬১ জনের।
• এখনও পর্যন্ত রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে-১৫ জনের।
*তথ্যসূত্র: রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ৭ই মে একটি গাড়ি করে প্রায় ৩০ জন শ্রমিক ওড়িশা থেকে আসেন। এঁদের মধ্যে তেহট্টের ১০ জন ছিলেন। প্রত্যেককেই প্রাথমিক বাবে পরীক্ষার পর গৃহবাসে থাকার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ১২ ই মে তাঁদের তেহট্ট কর্মতীর্থ আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৩ তারিখ লালারসের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তার পর বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার তাঁদের মধ্যে তেহট্টর দত্তপাড়ার বাসিন্দা ওই বছর আঠারোর তরুণের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাঁকে কল্যাণী কার্নিভাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রের খবর, ভিন রাজ্য থেকে ফিরে ওই যুবক গৃহবাসের নিয়ম মানেননি। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করে গল্প করেছেন এবং পিকনিকও করেছেন। তাঁর রিপোর্টের কথা জেনে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রবিবার রাতেই ওই এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। তাঁর ঠাকুমা, বাবা-সহ কয়েক জন আত্মীয়কে রাতেই তেহট্ট কর্মতীর্থের আইসোলেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সকালে দত্তপাড়া এলাকায় ওই যুবকের সংস্পর্শে আসা ২৭ জনকে চিহ্নিত করে তাঁদের লালারসের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। তাঁদেরও আইসোলেশন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত ওই যুবকের পাড়ায় ৯৫টি পরিবারের বাস। ওই এলাকা চারিদিক দিয়ে ব্যারিকেড করে দিয়েছে পুলিশ।
একই ভাবে কেরল থেকে ট্রেনে প্রথমে বহরমপুর স্টেশনে ও পরে বাসে সেখান থেকে গত ৭ মে করিমপুর-২ ব্লকে নিজের বাড়ি ফেরেন বছর আটচল্লিশের শ্রমিক। ১২ মে তাঁকেও তেহট্ট আইসোলেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। লালারস সংগ্রহ করে ১৩ মে বাড়ি পাঠানো হয়। রবিবার তাঁরও রিপোর্ট পজিটিভ আসে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তিও বাইরে থেকে ফিরে প্রথম কয়েক দিন গৃহবাসে থাকার বদলে অনেকের সঙ্গে দেকা করেছেন ও অনেকের বাড়ি গিয়েছেন। সেই সব ব্যক্তির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তা ছাড়া, একই অ্যাম্বুল্যান্সে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যাঁদের লালারস সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়েছিল তাঁদের সকলকেই তেহট্ট আইসোলেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এরই মধ্যে সোমবার নতুন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে শান্তিপুরের হরিপুর পঞ্চায়েতের বাগদেবীপুর। আক্রান্ত মহিলা নাতির অসুস্থতার কারণে ২৮ এপ্রিল থেকে বেশ কয়েক বার কলকাতায় যাতায়াত করেছিলেন। গত ১৩ মে তাঁর নাতির মৃত্যু হয়। ১৪ মে ওই মহিলা এবং তাঁর মেয়ে ও জামাইয়ের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্টে তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, বাকিদের নেগেটিভ। নদিয়ার জেলা শাসক বিভু গোয়েল বলেন, “এ দিন বিকেলেই আমরা রিপোর্ট পেয়েছি। ওই মহিলার গ্রামে প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”