প্রতীকী ছবি।
বছর বছর ইদের সময় ছেলের মুখ চেয়ে পথে বসে থাকেন কুলসুম দেওয়া কিন্তু এ বছর আর পথ চেয়ে বসে থাকা নয়, বরং দিনরাত উপরওলার কাছে হাত তুলে বসে আছে ছেলের যেন একটা কাজ মেলে। সে এ রাজ্যে হোক বা ভিন রাজ্যে। কেবল কুলসম নন, ডোমকলের হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের এখন একটাই প্রার্থনা পরিবারের কর্তারা কবে কাজে ফিরবেন। গ্রামে গঞ্জের বিভিন্ন পরিবারে রীতিমত হাহাকার শুরু হয়েছে ইদের আগে।
একদিকে করোনার থাবা, অন্যদিকে কাজ হারানো অনেক পরিবারেই ইদের আগে দুবেলা খাবার জোটানো কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেকেই বলছে রমজান মাস চলছে, ফলে কোনও ক্রমে ভোরবেলা কিছু খেয়ে দিনটা রোজার দোহাই দিয়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু ইদের পরে কী হবে বুঝে পাচ্ছি না।’’
বৃদ্ধ মা স্ত্রী আর তিন সন্তানকে নিয়ে ডোমকলের পরিযায়ী শ্রমিক মকলেসুর রহমানের মাথায় বাজ পড়েছে কাজ হারিয়ে। তার কথায়, ‘‘হালের বলদ বিক্রি করে কেরলে গিয়েছিলাম কাজের আশায়, কিন্তু মাস তিনেক কাজ করার পরে করোনা আর লকডাউনের আশঙ্কায় সপ্তাহ খানেক আগে ঘরে ফিরেছি। পকেটে কানাকড়ি নিয়েও ঘরে ফিরতে পারেনি। এখন কিভাবে দিন চলবে, আর ঈদের দিনটা কিভাবে কাটবে সেটা ভাবতে গেলে মাথার ভেতরটা শূন্য হয়ে যাচ্ছে।’’
ভোট মিটে গিয়েছে, ফলে এখন নেতাদের আর পরিযায়ী শ্রমিক বা সাধারণ মানুষ কেমন আছে সেটা দেখার আর দায় নেই। রাজনৈতিক দলের নেতারা ইদের আগে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের দিকে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি, সবে ভোটের ধাক্কা সামাল দিতে দিতে আবার করোনা লকডাউন এর ধাক্কা। ফলে এই সময়ে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন।
যদিও পরিযায়ী শ্রমিকরা বলছেন ভোটটা আর কটা দিন পরে হলেই কিছুটা হয়তো পাশে পেতাম রাজনৈতিক দলের নেতাদের। কিন্তু এখন ভোট পেরিয়ে গিয়েছে, ফলে নেতাদের আর ফিরে তাকানোর সময় নেই। পাড়ার নেতাদের কাজের কথা বলতে গেলে বলছে শুরু হবে লকডাউন, ফলে কিভাবে সংসার চলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। যদিও জলঙ্গির কংগ্রেস নেতা আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলছেন, ‘‘আমরা মানুষের এই পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব পাশে দাঁড়াব।’’ সিপিএমের দাবি, ‘‘আমাদের হাতে রাজনৈতিক কোনও ক্ষমতা নেই, পঞ্চায়েত গুলো সবই শাসকদলের। ফলে সরকারি উদ্যোগে মানুষের পাশে এই সময় দাঁড়াতে পারে শাসক দল। তবে আমরা আমাদের সাধ্যমত এর আগেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, এখনও দাঁড়াবো।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি আবু তাহের খানের সাফ কথা, ‘‘সাধারণ মানুষের এখনও খাবার অভাব হয়নি, আমি আমার বাড়িতে কাজের লোকের জন্য মাসে ৬০০০ টাকা দিয়েও পরিচারিকা খুঁজে পাচ্ছি না। ফলে মানুষের খাবারের অভাব আছে বলে মনে করি না। তাছাড়া আমাদের সরকার রেশন সহ নানা রকমের ভাতা দিয়ে সহায়তা করছে মানুষকে।’’