Coronavirus

অক্সিজেনের টান কোভিড হাসপাতালে

কৃষ্ণনগরের গ্লোকাল কোভিড হাসপাতালের আইসিইউ-এ ১০টি শয্যা আছে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ২৩:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র।

নদিয়ার দুই কোভিড হাসপাতালে অক্সিজেনের সঙ্কট দেখা দিতে শুরু করেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক সূত্রের দাবি। পর্যাপ্ত সংখ্যক বড় (‘ডি টাইপ’) সিলিন্ডার তো নেই-ই, ফাঁকা সিলিন্ডার ‘রি-ফিলিং’ করার কাজটাও ঠিক মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ। প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে অন্য হাসপাতাল থেকে সিলিন্ডার এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হলেও আগামী দিনে পরিস্থিতি কঠিন হতে চলেছে তা অস্বীকার করতে পারছেন না স্বাস্থ্য দফতরের কিছু কর্তাও।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের দাবি, যত ‘ডি’ টাইপ সিলিন্ডার ‘অর্ডার!’ করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক কম সরবরাহ করেছে রাজ্যের অনুমোদন প্রাপ্ত সংস্থা। যে সংস্থাকে ‘রি-ফিলিং’ করার বরাত দেওয়া আছে তারাও একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে ‘রি-ফিল’ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে। এ দিকে কোভিড হাসপাতাল দু’টিতে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। চালু হতে চলেছে তিনশো শয্যার নতুন কোভিড হাসপাতালও!

কৃষ্ণনগরের গ্লোকাল কোভিড হাসপাতালের আইসিইউ-এ ১০টি শয্যা আছে। তার জন্য ৩৫টি বড় সিলিন্ডার বরাদ্দ আছে। সেখানে দিনে গড়ে ৮-১০ জন করে রোগী থাকেন। সিলিন্ডারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলেই চিকিৎসকদের একাংশের দাবি। আবার হাতে ৩৫টি সিলিন্ডার বরাদ্দ থাকলেও বেশির ভাগ দিন ২০টির বেশি ‘রি-ফিলিং’ হয়ে আসে না বলে অভিযোগ। দরকারে সিলিন্ডার সরবরাহ করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল। বুধবার রাতেও সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে ১০টি সিলিন্ডার পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

কোভিড হাসপাতাল সূত্রের খবর, এর পাশাপাশি ‘বি টাইপ’ অর্থাৎ ছোট সিলিন্ডার ব্যবহার করে কোনও মতে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যে আবার ‘রি-ফিলিং’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা দিনে ১০টির বেশি সিলিন্ডার ভরতে পারবে না। ফলে পরিস্থিতি জটিলতর হয়েছে। দিন দুই আগে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিজে গাড়ি পাঠিয়ে ‘ডি টাইপ’ সিলিন্ডার ‘রিফিলিং’ করিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

প্রায় একই অবস্থায় কল্যাণীর কার্নিভাল কোভিড হাসপাতালেও। সেখানে আইসিইউ-এ ছ’টি শয্যা, তার জন্য বরাদ্দ আছে ২৬টি ‘ডি টাইপ’ সিলিন্ডার। সেখানেও সামাল দিতে জেএনএম হাসপাতাল থেকে ভরা সিলিন্ডার পাঠাতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, সিসিইউ বা এসডিইউ-এর ৪০টি শয্যা পিছু ৩০০ করে ‘ডি টাইপ’ সিলিন্ডার থাকার কথা। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলানয় বেশ কম রয়েছে। জেলার কাছে ওই ধরনের সিলিন্ডার আছে মাত্র শ’খানেকের মতো। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথম দিকে তত রোগী না থাকায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে শ’খানেক ‘ডি টাইপ’ সিলিন্ডারের বরাত দেওয়া হয়েছিল। তারা দেয় মাত্র ৬০টি। তার পরে আর কোনও সিলিন্ডার তারা পাঠায়নি। বাকিটা জেলা হাসপাতাল ও জেএনএম হাসপাতাল থেকে ‘ম্যানেজ’ করার পাশাপাশি কিছু ভাড়া করা করে চালানো হচ্ছে। মাস দুয়েক আগে আরও ৮২টি ‘ডি টাইপ’ সিলিন্ডার ‘অর্ডার’ করা হলেও এখনও পর্যন্ত একটাও পাওয়া যায়নি।

এ দিকে, পুজোর পরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়বে এই আশঙ্কায় গ্লোকাল ও কার্নিভালে ১০টি করে আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ৩৬টি শয্যার জন্য ২৭০টি সিলিন্ডার প্রয়োজন। অথচ আছে মাত্র ১০০। কল্যাণী যক্ষ্মা হাসপাতালে ৩০০ শয্যার যে কোভিড হাসপাতাল চালু হতে চলেছে, সেখানেও ৪০টি শয্যার আইসিইউ করতে হবে। তার জন্য আরও ৩০০ সিলিন্ডার প্রয়োজন। সেই মতো রাজ্যের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বীকার করেন, “অক্সিজেনের অভাব আছে। কিছুটা হলেও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সেটা বিভিন্ন ভাবে মেটানোর চেষ্টা চলছে।” তবে তাঁর দাবি, “এখনও পর্যন্ত অক্সিজেনের অভাবে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। স্বাস্থ্য ভবনকে পুরোটাই জানানো হয়েছে।” জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, স্বাস্থ্য ভবন থেকে অক্টোবরের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছে। জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “আশা করছি, দ্রুত সিলিন্ডার পেয়ে যাব। আর সমস্যা থাকবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement