Coronavirus in West Bengal

উপসর্গ নিয়েই বাড়িতে, ত্রস্ত গ্রাম

সালারের সালু অঞ্চলের ভূশণ্ডি গ্রামের ক্যানসার রোগী এক বৃদ্ধের করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পজ়িটিভ পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০২:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি

কোভিড-১৯’র উপসর্গ তাঁদের শরীরে স্পষ্ট। শ্বাসকষ্ট এবং জ্বর নিয়ে হাঁফাতে থাকা ওই চারজনের লালারস সংগ্রহ করে পাঠানোও হয়েছে পরীক্ষায়। তবে, আইসোলেশন ওয়ার্ড দূর অস্ত্ এমনকি কোয়রান্টিনেও পাঠানো হয়নি তাঁদের, ঠাঁই হয়েছে আপন বাড়িতেই। আর তা নিয়েই গ্রামের মানুষ থেকে বিরোধী শিবিরের প্রশ্নের মুখে পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

সালারের সালু অঞ্চলের ভূশণ্ডি গ্রামের ক্যানসার রোগী এক বৃদ্ধের করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পজ়িটিভ পাওয়া গিয়েছে। তা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই সিঁটিয়ে রয়েছে ভূশণ্ডি এবং তার পড়শি গ্রামের বাসিন্দারা। পরিবার তো বটেই ভূশণ্ডির একাধিক বাসিন্দাকে পাঠানো হয়েছে কোয়রান্টিনে। পড়শি গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে হুহু করে। অধিকাংশ গ্রাম বাঁশের বেড়া ঘিরে ‘আত্মরক্ষায়’ নেমেছে! তা সত্ত্বেও সোমবার, সালারের সালু অঞ্চলের খাঁড়েরা গ্রামের দুই প্রৌঢ় এবং দুই মহিলার করোনা-উপসর্গ দেখা দেওয়ায় লালারস সংগ্রহ করা হয়। তবে তার পরেই তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের নিজের বাড়িতে। যদিও, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি, কোনও বেনিয়ম নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনেই যা করার তা করা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, “যে এলাকায় করোনাভাইরাস পজ়িটিভ রোগী পাওয়া যায়, সেই এলাকায় শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের লালারস পরীক্ষা করাই নিয়ম। কিন্তু তাঁদের আইসোলেশনে না রেখে নিজের বাড়িতেই রাখা হয়। আমরা সেই নিয়মেই কাজ করছি।”

সে কথায় অবশ্য ভরসা পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা গুরুপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘রোগের লক্ষণ যখন রয়েছে তখন রিপোর্ট না-পাওয়া পর্যন্ত ক’টা দিন হাসপাতালে রাখলে কী এমন ক্ষতি হত। গ্রামের মানুষও এমন দমচাপা আতঙ্কে ভুগত না।’’ গ্রামের বাসিন্দা ইফতার আলির কথায়, ‘‘নিজের চোখে দেখলাম অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে ওঁদের আবার গ্রামে ফিরিয়ে আনা হল। স্বাস্থ্য দফতর সামাজিক দূরত্বের কথা বলছে, লিফলেট ছড়িয়ে সচেতন করছে। আর এটা কেমন সচেতনতা!’’

Advertisement

জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘উপসর্গ রয়েছে, লালারস পরীক্ষা করতেও পাঠানো হয়েছে। দিন কয়েক আগে, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকেও জেনেছিলাম, লালারস পরীক্ষা করার পর যতক্ষণ না সন্দেহভাজনদের রিপোর্ট পাওয়া যায় তত দিন সরকারি আইসোলেশনে অথবা কোয়রান্টিনে রাখতে হয়। তা হলে এই বেনিয়ম হল কেন।’’ জেলা সিপিএম সম্পাদক নৃপেন চৌধুরীও বলছেন, ‘‘নিয়ম না মানাটাই এ সরকারের নিয়ম হয়ে গিয়েছে। উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের আইসোলেশনে রাখাই তো নিয়ম।’’ স্থানীয় সালু পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের মুস্তাক আলিও বলছেন, ‘‘ওঁদের যদি সত্যিই ফিরিয়ে আনা হয়ে থাকে, তা হলে ওঁদের বাড়ির কাউকে বেরোতে বারণ করব। গ্রামের মানুষের ভয় তো অমূলক নয়।’’

তবে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস অবশ্য বলছেন, ‘‘এখন রাজনীতি করার সময় নয়। তবে চিকিৎসকদের উপরে আমাদের ভরসা রয়েছে। তাঁরা নিশ্চয় ভেবেচিন্তেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement