Coronavirus

শ্বশুরবাড়ি পা রাখতেই জামাইকে নিয়ে প্রশ্ন

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জামাই গ্রামে আসতেই জলঙ্গির জয়কৃষ্ণপুর করুণাময় পন্ডার বাড়ির সামনে ভিড় করে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৩:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

তিনি সেনাবাহিনীর জওয়ান। সীমান্ত সামাল দিয়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছেন অনেক দিন পরে। বাবাবজীবনের জন্য হা পিত্যেস করে বসে থাকা গোটা শ্বশুরবাড়ি আপ্যানের অপেক্ষায়। কিন্তু গ্রামে পা দিতেই যে অভ্যর্থনা অপেক্ষা করে ছিল, তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেননি মনোজ মণ্ডল। হতবাক হয়ে তিনি তোপ দাগতে গিয়ে দেখেন, আস্ত জয়কৃষ্ণপুর গ্রামখানা তাঁর মুখোমুখি তেরিয়া মেজাজ নিয়ে দাঁড়িয়ে। তাঁদের একরোখা দাবি— ‘বাইরে থেকে এসেছ, কে বলতে পারে করোনার সংক্রমণ নিয়ে আসনি!’

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জামাই গ্রামে আসতেই জলঙ্গির জয়কৃষ্ণপুর করুণাময় পন্ডার বাড়ির সামনে ভিড় করে। দাবি, এখানে থাকা চলবে না। গ্রামবাসীদের এমন অবুঝ দাবি সামাল দিতে ছুটে আসে পুলিশ। আসেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। প্রায় ঘণ্টাখানেকের তর্ক বিতর্কের পরে শেষতক রফা হয়— তা বেশ থাক, তবে হোম কোয়রান্টিন, শ্বশুরবাড়ির চৌহদ্দির বাইরে এক পা-ও নয়।

সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে তাঁর শ্বশুর করুণাময়ের মন্দিরে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। করুণাময়বাবু বলছেন, ‘‘যাবতীয় তথ্য প্রশাসনকে দেওয়ার পরেও গ্রামের এক শ্রেণীর মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবেই গুজব রটিয়ে বয়কট করেছেন আমাদের। এটা প্রাপ্য ছিল না।’’ এলাকার বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, যে রাজ্য থেকে ‘জামাই’ এসেছেন তা নাকি আদতে ‘রেড জ়োন’। গ্রামে নয়, তাঁকে তাই থাকতে হবে কোয়রান্টিন সেন্টারে। এক গ্রামবাসীর অনড় দাবি, ‘‘এই সময়ে বাইরের লোক গ্রামে আসা ঠিক নয়। পাঁচ জায়গা ঘুরে আসা মানুষ গ্রামে যদি রোগের প্রকোপ বয়ে আনে!’’ কিন্তু তাঁর তো পরীক্ষা হয়েছে? সে কথা শুনবে কে!

Advertisement

জলঙ্গি পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মমতা হালদার বলছেন, ‘‘ওই জওয়ানের ঘরে ফেরাকে ঘিরে একটা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল এলাকায়। একটা অপ্রীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তবে এখন সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।’’ অপমানিত মনোজ মণ্ডল অবশ্য বলছেন, ‘‘১৭ বছর দেশসেবা করছি, সেকেন্দ্রাবাদ ক্যাম্পে ১৪ দিন কোয়রান্টিনে থেকে তারপর এই এলাকায় ফিরেছি যাবতীয় নিয়ম মেনে। তার পরেও এমন অপমানিত হতে হবে ভাবিনি।’’ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরে যাবতীয় নথি দিয়েছিল ওই জওয়ান। এমনকি নিজে থেকেই হোম কোয়ারান্টিনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তার পরেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মানুষ বাড়ির সামনে এসে যে ধরনের আচরণ করে তা একেবারেই মেনে নিতে পারছে না। রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের কাছে নালিশ জানিয়েছেন মনোজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement