coronavirus

টিকা-দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ নেতারা

শাসকদলের জনপ্রতিনিধি ও নেতারা নিজেদের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৫:২১
Share:

প্রতীকী ছবি।

দীর্ঘদিন ধরে কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় সেলুন চালিয়ে আসছেন তিনি। এখন ফোনে ডাক এলে বাড়িতে গিয়ে চুল-দাড়ি কেটে দিয়ে আসছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ সদ্য কোভিডমুক্ত হয়েছেন। আবার কেউ সুস্থ। বিধিনিষেধের সময় ছাড়া তাঁর সেলুনেও সারাদিন খরিদ্দারের ভিড় লেগে থাকে। ফলে প্রতি মুহূর্তে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। তিনি স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলেছেন। তাঁর নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন বাজার কমিটির কাছেও। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। টিকা পাননি। তিনি বলছেন, “যে কোন সময়ে সংক্রমিত হতে পারি। আমি টিকা পেলাম না। অথচ আমার শালি ও তার বর দিব্যি টিকা পেয়ে গেল স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের কাছের লোক হওয়ায়।”

Advertisement

এমনটা যে একটাই ঘটেছে তা নয়। নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। জেলা জুড়ে প্রায় সর্বত্রই রাজ্যের দায়িত্বে থাকা ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। শাসক দলের নেতা-জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে স্বজনপোষণের। অভিযোগ উঠছে প্রকৃত যোগ্যদের বঞ্চিত করে তাদের ঘনিষ্ঠ ও আত্মীয়দের নাম তুলে দেওয়া হচ্ছে তালিকায়। যাঁরা কেউই রাজ্যের বেঁধে দেওয়া ‘সুপারস্প্রেডার’ তালিকাভূক্ত শ্রেণির মধ্যে পড়েন না। তাঁদের একমাত্র যোগ্যতা তাঁরা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বা নেতার আত্মীয়-পরিজন। অন্তত এমনটাই অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। অভিযোগ আসতে শুরু করেছে তৃণমূলের অন্দর থেকেও। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন যে আমপানের মতই শাসক দল প্রকৃত যোগ্যদের বঞ্চিত করে নিজেদের লোকজনকে টিকা পাইয়ে দিচ্ছে। আমপান ছিল অল্প কয়েক জনের বিষয়। আর এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে।

অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সের বিভিন্ন শ্রেণির উপভোক্তাদের নামের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েতের উপরে। পঞ্চায়েত থেকে নামের তালিকা তৈরি করে ব্লককে দিচ্ছে। ব্লক থেকে তালিকা আসছে জেলায়। আবার পুরসভা তালিকা তৈরি করে মহকুমাশাসককে দিচ্ছে। সেই তালিকা চলে আসছে জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসন থেকে সেই তালিকা চলে যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। পরে স্বাস্থ্য দফতর থেকে তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের টিকা দিচ্ছে।

Advertisement

অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে যে গোড়াতেই গলদ। কারণ এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সদস্য ও পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলররাই তালিকা তৈরি করে পঞ্চায়েত বা পুরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিচ্ছেন। আর সেখানেই অনিয়ম শুরু হয়ে যাচ্ছে, শাসকদলের জনপ্রতিনিধি ও নেতারা নিজেদের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবারও কৃষ্ণনগর পুরসভার এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের পরিবারের একাধিক সদস্য টোটো চালকদের তালিকায় নাম তুলে টিকা নিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টোটো চালকদের মধ্যে ওই কাউন্সিলরের পরিজন প্রায় ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা ও একাধিক মহিলাকে দেখে প্রতিবাদ করেন কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীরাই। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। কৃষ্ণনগর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বারের প্রাক্তন কাউন্সিলর তৃণমূলের প্রদীপ দত্ত বলেন, “আমরা জানতে পারছি যে টোটো চালকদের যে তালিকা তৈরি করে জমা দেওয়া হয়েছে সেখানে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা টোটো চালান না। তাঁরা টিকা পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমার অনেক টোটো চালক আছেন যাঁরা টিকা পাননি।”

এই একই অবস্থা নবদ্বীপ, শান্তিপুর, রানাঘাট, কল্যাণী, চাকদহের মত শহর থেকে শুরু করে নাকাশিপাড়া, তেহট্ট, কালীগঞ্জের মত গ্রামাঞ্চলেও। প্রকাশ্যে মন্তব্য বলতে না চাইলেও আমপানের পর আবার টিকা নিয়ে একই ধরনের অভিযোগ উঠতে শুরু করায় বিব্রত হচ্ছেন শাসক দলের নেতাদের একটা অংশ। তাঁরা দলের ভিতরে এ নিয়ে আপত্তি জানালেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তৃণমূলেরই অনেকের আশঙ্কা, “আমপান যেমন বিধানসভা ভোটের আগে ঘুম কেড়ে নিয়েছিল তেমনই টিকা-দুর্নীতি আগামী পুরভোটে বড় বিপত্তি হয়ে উঠতে পারে।”

জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি অবশ্য বলেন, “সবটাই রাজ্যের গাইডলাইন মেনে হচ্ছে। তেমন কোনও অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে সেই মত পদক্ষেপ করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement